সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সেখ সালাহউদ্দিন ওরফে সেখ জুয়েল বর্তমানে ভারতের নাগরিক পরিচয়ে চলাফেরা করছেন, যেখানে তার নতুন নাম বিধান মল্লিক। ভারতীয় আধার কার্ডে তার বাবার নামও পরিবর্তন করে শেখ আবু নাছেরের পরিবর্তে মুদিন্দ্রনাথ মল্লিক লেখা হয়েছে। এই তথ্য প্রকাশের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সেখ জুয়েলের মতো শেখ পরিবারের আরও অনেক সদস্য ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং আধার কার্ডের মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় পরিবর্তন করেছেন। ভারতীয় আধার কার্ডের কপি বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এসেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে তার নতুন নাম এবং ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সেখ সালাহউদ্দিন, এবং ২০২৪ সালেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকার পতনের পর তিনি ও শেখ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য ভারতে আশ্রয় নেন।
এর আগে, শেখ পরিবারের অনেক সদস্য সেনাবাহিনীর হেফাজতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যেখানে ৬২৬ জনকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে তারা ক্যান্টনমেন্টের নিরাপত্তা হেফাজত থেকে বেরিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে সেখ জুয়েলসহ তার বড় ভাই শেখ হেলাল, শেখ সোহেল ও ছোট ভাই শেখ রুবেল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থান করছেন। জানা গেছে, সেখ জুয়েল তার ভারতীয় পরিচয় ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় অবাধে চলাফেরা করছেন এবং বিশেষ ট্রাভেল কার্ডের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াতও করছেন।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সেখ জুয়েলের ভারতীয় আধার কার্ডে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে বিধান মল্লিক হিসেবে, যেখানে জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৫৯ এবং ঠিকানা শাড়াপুল, ডাকবাংলো, স্বরূপনগর, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ-৭৪৩২৮৬। তবে তার বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নাম সেখ সালাহউদ্দিন, জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৬৭ এবং ঠিকানা সোনাডাঙ্গা, খুলনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্যের এমন কর্মকাণ্ড শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য নয়, বরং দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও নৈতিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা একটি দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার এভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং নতুন পরিচয়ে বসবাস করা রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের ভেতরে প্রতিক্রিয়া তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানা গেছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন এবং এই ধরনের কর্মকাণ্ড কেন ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সংকটের জন্ম দিতে পারে এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের দিক থেকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, সেখ জুয়েলের নাগরিকত্ব পরিবর্তনের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে যে, ভারতের বিশেষ কিছু মহলের সহায়তায় এই নাগরিকত্ব পরিবর্তনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও একই পথ অনুসরণ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও নজর রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে আইন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শুধু একটি ব্যক্তিগত পরিচয় পরিবর্তনের ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিভিন্ন দিক রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় আলোচনার জন্ম দিতে পারে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?