দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে এসে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, “কথা বললেই মামলার সংখ্যা বাড়ে। পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে রাখে। কথা বলে কী লাভ?”
সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি। বেলা ১টা ৫০ মিনিটে তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয় এবং হাজতখানায় নেওয়া হয়।
এ সময় পলকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম জানান, সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে একের পর এক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে, যা তার প্রতি অন্যায় আচরণ। তিনি বলেন, “পলক ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। তাকে দাগি আসামিদের মতো পিছমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে আনা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অপমানজনক ও অমানবিক।”
দুদকের মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়েছে, জুনাইদ আহমেদ পলক জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন এবং তা ভোগদখলে রেখেছেন। এছাড়া, তার নামে থাকা ২৫টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৩২ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৪ টাকা জমা এবং ২৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৫ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে তিনি অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। দুদকের অভিযোগ, এসব লেনদেনের মাধ্যমে তিনি ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন।
পলকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে, ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেফতার করে। এরপর একাধিক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বারবার রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি হিসেবে রয়েছেন।
জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরা। তারা বলছেন, “একজন সাবেক মন্ত্রীকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া, আদালতে হেনস্তা করা এবং দাগি আসামিদের মতো আচরণ করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।” অন্যদিকে, দুদক বলছে, পলকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো গুরুতর এবং তদন্তের স্বার্থে তাকে আইনের আওতায় রাখা প্রয়োজন।
এদিকে, তার দল বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সরকার পলককে রাজনৈতিক প্রতিশোধের শিকার বানিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর থেকেই সরকার বিরোধী নেতাদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে একের পর এক মামলা দিচ্ছে।
অন্যদিকে, দুদক ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে পলক প্রকৃতপক্ষে অবৈধ সম্পদের মালিক, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বিশ্লেষকরা বলছেন, পলকের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মামলা বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথভাবে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত, যাতে আইনের শাসন নিশ্চিত হয় এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনো সুযোগ না থাকে।
এই মামলার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যায়, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, কারণ এটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা নয়, বরং রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকনির্দেশক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?