দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে রাজপথে নামছে দেশে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা বড় তিন দল। ঈদের পর কর্মসূচি পালন শুরু করবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ইতোমধ্যে এর প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলগুলো।
বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চেয়ে নিজেদের জোরালো অবস্থান জানালেও আরও কয়েকটি ইস্যুতে কর্মসূচি পালনের ইঙ্গিত দিয়েছে এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তিন বড় রাজনৈতিক দল মাঠে নামলে রাজপথ ফের উত্তপ্ত হবে। এখন তারা ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। এ কারণে রমজান মাসে বড় ধরনের কোনো ইস্যু সামনে না এলে দলীয় তেমন কর্মসূচি থাকছে না। তবে ঈদের পর তিন দলই পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে এর আগে রাজনীতির মাঠ গরম হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ও স্থাপনায় ভাঙচুরের ঘটনায় উত্তপ্ত ছিল ছিল সারা দেশ। এখন দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করে প্রস্ততি সারছে বিএনপি। ঈদের পর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
সূত্রগুলো বলছে, দলীয় নেতার মুক্তি, আওয়ামী লীগের বিচারসহ কয়েকটি দাবিতে বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামী। আর নতুন দল এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন চেয়ে কর্মসূচি পালন করবে। দলগুলোর নেতারা এসব দাবিতে আল্টিমেটামও দিচ্ছে।
জানা গেছে, নির্বাচনের সময় নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না এলে মাঠের কর্মসূচি বাড়ারে বিএনপি। তাদের সঙ্গে জোটের শরিক, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ধর্মভিত্তিক কিছু দলও চাচ্ছে দ্রুত নির্বাচন হোক। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি সরকারকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য এক মাসের আলটিমেটাম দেন। পরে বিএনপির বর্ধিত সভায়ও নির্বাচনে গুরুত্ব দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে চাপে রাখার পক্ষে মত দেন কয়েকজন নেতা।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, নির্বাচন দিতে গড়িমসি করলে মাঠের কর্মসূচি জোরদার হবে।
ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি কর্মসূচির বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে শিগগিরই নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদনের পাশাপাশি সংস্কারের পর ভোট ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি পালনের ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা। তারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে জোর দিচ্ছে। এর আগে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান না। এখন কার্যালয়, গঠনতন্ত্র তৈরি, কমিটি দেওয়াসহ নানান কাজে ব্যস্ত দলটি।
সম্প্রতি দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল ভুল করেও অন্য কিছু চিন্তা না করে। যত দিন খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, তত দিন কেউ যেন নির্বাচনের কথা না বলে।’ এ নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
এনসিপির মতো জামায়াতে ইসলামীও সংস্কার শেষে নির্বাচন করার পক্ষে। স্থানীয় নির্বাচন আগে করার পক্ষে অবস্থান দলটি, এ নিয়ে সক্রিয় নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করেছে। মুক্তি বিলম্ব হলে কর্মসূচি পালন করবে তারা।
আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতেও কর্মসূচি পালন করবেন নেতা-কর্মীরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঈদের পরের কর্মসূচি ঠিক হবে বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন।
চাঁদপুরে এক সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, স্থানীয় নির্বাচন হলে জনগণের দুর্ভোগ কাটবে। এরপর জাতীয় নির্বাচন চাইলেও তার আগে কিছু সংস্কারের কথা বলেছেন তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সময় কোনো বিষয় নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনই আসল কথা। তাঁর এই বক্তব্যে আপনার সমর্থন আছে কি?