বহুল আলোচিত অর্থপাচার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন হাইকোর্ট থেকে সম্পূর্ণ খালাস পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ মামুনের আপিল মঞ্জুরের পাশাপাশি তারেক রহমানকেও অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন।
তারেক রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মামলার অবসান ঘটল।
মামলার পটভূমি
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় দাখিল হওয়া এ মামলায় অভিযোগ ছিল, তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ঘুষ হিসেবে ২০ কোটি টাকা গ্রহণ করে তা বিদেশে পাচার করেছেন। ২০১০ সালের ৬ জুলাই দুদক তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে ২০১১ সালের ৬ জুলাই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন রায়ে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিলেও মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইনি লড়াই
তারেক রহমানের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে। হাইকোর্টে শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তারেক রহমানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেন এবং মামুনের সাজা বহাল রেখে অর্থদণ্ড ৪০ কোটি থেকে কমিয়ে ২০ কোটি করা হয়।
তবে ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারেক রহমানের আইনজীবীরা নতুন আইনি পদক্ষেপ নেন। একইসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন। সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর তাদের সাজা ও অর্থদণ্ড স্থগিত করে আপিল গ্রহণ করা হয়।
আদালতের চূড়ান্ত রায়
সর্বোচ্চ আদালতে দীর্ঘ শুনানির পর বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট আপিল মঞ্জুর করে তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ খালাস দেন। এর ফলে তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলার সব আইনি বাধা দূর হলো।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিএনপির নেতারা এই রায়কে “ন্যায়ের বিজয়” বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ সুগম করতে পারে।
এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই রায়ের মাধ্যমে বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য দায়ের করা মামলাগুলোর আইনগত ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, এই রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, এই রায় তারেক রহমানের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং তার দেশে ফেরার জল্পনাকে আরও জোরদার করবে।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
এখন দেখার বিষয়, এই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক বা রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে কিনা এবং তারেক রহমান আগামী দিনে রাজনীতির ময়দানে সরাসরি সক্রিয় হন কিনা। তবে এটি নিঃসন্দেহে বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ও রাজনৈতিক বিজয়।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সাময়িক মজুতদারির কারণে চালের বাজার অস্থিতিশীল। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?