অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়কার অন্যতম নেতা ও মুখপাত্র মো. নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নাহিদ ইসলাম তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন, “মহোদয়, আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। প্রথমেই আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।”
তিনি আরও লেখেন, “বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আপনার নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে আমাকে সুযোগ দানের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে শপথ নেওয়া উপদেষ্টা পরিষদে আমি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাই।”
নাহিদ ইসলাম তার পদত্যাগপত্রে আরও উল্লেখ করেছেন, “নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি। ফলে আমি আমার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া সমীচীন মনে করছি।”
সবশেষে তিনি লেখেন, “এমতাবস্থায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি। আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে মহোদয়কে সবিনয় অনুরোধ করছি।”
সূত্র জানায়, নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি এই দলের নেতৃত্ব দেবেন, এবং সে কারণেই উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের কথা রয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন চলছিল যে, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আসছে। উপদেষ্টা পদে থাকা অবস্থায় তিনি বেশ কয়েকবারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, পদত্যাগ করেই তিনি নতুন দলে যোগ দেবেন। তার এই পদত্যাগের মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ আরও সুগম হলো।
নাহিদ ইসলাম ১৯৯৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ‘ফাহিম’। তার বাবা একজন শিক্ষক। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার ছোট এক ভাই রয়েছে এবং ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত।
জুলাই মাসেও নাহিদ ইসলাম ততটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। তবে, সেই মাসের মাঝামাঝিতে তাকে অপহরণ করা হলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে তিনি দুইবার আটক হন এবং অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর, ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যেখানে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। তবে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্তের কারণে তিনি আজ সেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?