খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে অবস্থান নিলেও,
অন্যপক্ষ একে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ হিসেবে দেখছে। এই বিতর্কের মধ্যেই ছাত্রশিবির নেতা জাহিদুল ইসলাম এক বক্তব্যে বলেন, “ছাত্রদলকে আমরা শত্রু মনে করি না, ছাত্রশিবিরের উদারতাকে দুর্বলতা ভাববেন না।”
তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতি বার্তা দিয়েছেন যে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও একে অপরের শত্রু নয়। পাশাপাশি, ছাত্রশিবিরের সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে যেন কেউ দুর্বলতা হিসেবে না নেয়, সে বিষয়টিও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করে, দলীয় ছাত্ররাজনীতির কারণে
ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে এবং মারামারি, দখলদারিত্ব ও দলীয় প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা বাড়ছে। অন্যদিকে, ছাত্ররাজনীতির পক্ষে থাকা সংগঠনগুলো বলছে, এটি গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার।
এই প্রেক্ষাপটে ছাত্রশিবিরের অবস্থান কিছুটা কৌশলী। তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় বজায় রেখেও অন্য সংগঠনগুলোর প্রতি নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করছে। জাহিদুল ইসলামের বক্তব্য সেই কৌশলেরই প্রতিফলন।
আমরা শত্রু মনে করি না”—এই বক্তব্যের মাধ্যমে ছাত্রদলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে। এটি হয়তো কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিতও বহন করতে পারে, বিশেষ করে যখন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
অন্যদিকে, “উদারতাকে দুর্বলতা ভাববেন না”—এই কথার মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ছাত্রশিবির আপাতত সহনশীল আচরণ করলেও, প্রয়োজন হলে তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়তে পারে। এটি মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনগুলোর প্রতি একটি সতর্কবার্তা।
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ ক্রমেই জটিল হচ্ছে। সরকারি দল ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্যের পাশাপাশি বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে। কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি আসার পর এ নিয়ে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ছাত্রশিবিরের এই বক্তব্য তাদের নতুন রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে, যেখানে তারা সরাসরি সংঘর্ষে না গিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। তবে এই অবস্থান কতটা কার্যকর হবে এবং ভবিষ্যতে তারা কীভাবে রাজনীতি করবে, তা সময়ই বলে দেবে।
কুয়েটের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ছাত্রশিবির তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জাহিদুল ইসলামের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা সংঘাতের পথ না নিয়ে
কৌশলগতভাবে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যেতে চায়। তবে এটি আদর্শিক পরিবর্তন, নাকি সাময়িক কৌশল—তা পরিস্থিতি নির্ভর করবে।

‘ছাত্র-জনতা হত্যার সম্পূর্ণ বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনীতি করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত’ আপনি কি সমর্থন করেন?