রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখন প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোকেই তাদের সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে, আর সরকার এই উদ্যোগে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
তার মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবই অনেক সমস্যার মূল কারণ, যা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।
রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দল নিজেদের স্বার্থের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
দলীয় নেতৃত্বে একচেটিয়া প্রভাব, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থা কমে গেছে। এর ফলে দেশে সুশাসনের অভাব দেখা দেয় এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য দলগুলোর উচিত নিজস্ব গঠনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ানো, নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রাখা এবং নতুন নেতৃত্ব গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভুলত্রুটি বুঝতে পারে এবং সঠিক পথে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে সরকার ও প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র চর্চার অভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারতন্ত্র ও আজীবন নেতৃত্বের সংস্কৃতি দেখা যায়, যা নতুন নেতৃত্ব গঠনের পথে বাধা। তাই দলগুলোর উচিত অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি বাছাই করা।
রাজনীতিতে কালো টাকার প্রবাহ কমাতে হবে এবং স্বচ্ছ তহবিল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থের উৎস ও ব্যয়ের বিষয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকা জরুরি।
তরুণ প্রজন্মকে রাজনৈতিক নেতৃত্বে সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা নতুন চিন্তাধারা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসতে পারে। এতে রাজনীতি আরও উদ্ভাবনী ও গণমুখী হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন যে, সরকার ও প্রশাসন রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা আনতে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা হতে পারে, পাশাপাশি দলীয় গণতন্ত্রের উন্নয়নে নীতিগত সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “আমরা কোনো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করব না, তবে যদি তারা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চায়, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।”
রাজনৈতিক সংস্কার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অপরিহার্য। দলগুলোর উচিত স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের ভেতরে পরিবর্তন আনা এবং জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতায়, যদি দলগুলো সুশাসন ও গণতান্ত্রিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে দেশের রাজনীতি আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনকল্যাণমুখী হবে।

‘ছাত্র-জনতা হত্যার সম্পূর্ণ বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনীতি করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত’ আপনি কি সমর্থন করেন?