বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েও দেশের মধ্যে উসকানি দিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। মুক্তিপাগল মানুষ এসব সহ্য করবে না। উসকানির ফলে বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তার দায়ভার সম্পূর্ণ উসকানিদাতার।
আজ শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিক বলেন, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশের যত টাকা চুরি-ডাকাতি ও লুট করে বিদেশে পাচার করেছে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সে টাকা জনগণের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করতে হবে।
জামায়াত আমির বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ এতদিন অনেক কষ্টে ছিল। এই নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের তৎকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে এই শহরের এক গডফাদার ৭২ ফিট লম্বা ব্যানাার টানিয়েছিল।
তাতে লেখা ছিল, নারায়ণগঞ্জে গোলাম আযমের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ডিসি, এসপির উপস্থিতিতে গডফাদার শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে খুনের অগ্রিম মামলা করে রাখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযম সাহেব মারা যান। গডফাদারের সুযোগ হয় নাই? আজ তিনি কোথায়? নারায়ণগঞ্জে নেই?
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এত অহংকার ভালো না, দাম্ভিকতা ভালো না। সন্ত্রাসকে কখনো পশ্রয় দিতে হয় না। তাহলে দুনিয়াতেই তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়।
এছাড়া আখেরাতে তাকে শূলে চড়াবেন। যেটা হবে আগুনের মহাকুণ্ড। তাই বলি, তওবা করুন। মানুষ মতো মানুষ হোন।
জামায়াত আমির বলেন, গত ৫৪ বছর এই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আর সুকৌশলে এই বিভক্তি সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করেছিল। তারা বিভক্তির শুরু করেন পাহাড়িদের নিয়ে। তারা ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা সবাই বাঙালি।
কিন্তু এটা নিয়ে পাহাড়িরা প্রতিবাদ করেন। তখন থেকে এই যে বিভক্তি শুরু হয়েছে তা এখনো চলমান রয়েছে। এখনো ওইখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। তারা এখন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এই বিভক্তি যতদিন থাকবে ততদিন এই জাতির মধ্যে একতা সৃষ্টি হবে না। যা দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর প্রত্যক্ষ করেছে।
ডা. শফিক বলেন, দেশের একজন নাগরিকের সব অধিকার পাওয়ার আছে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আমাদের এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন। আওয়ামী লীগ দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। প্রশাসনকে, বিচারব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ পুরোদমে ধ্বংস করে দিয়েছে।
জামায়াত আমির আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সবার আগে শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দেবে। এদেশের ছাত্র সমাজের জন্য উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা করে তুলবে।
শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পর কাউকে আর বেকার থাকতে হবে না। প্রত্যেকের জন্য যথোপযুক্ত কর্মের ব্যবস্থা করা হবে। নারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। এদেশের কৃষি শিল্প, এগ্রো শিল্পগুলোকে আরও সমৃদ্ধশালী করা হবে।
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকারের আমলে দেশ থেকে গত সাড়ে ১৫ বছরের ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সেগুলো ফেরত এনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এদেশের কল্যাণ সুষম ব্যয় করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,
জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ধান্দাকে ঘৃণা করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন দেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে ঘুষ দুর্নীতি থাকবে না।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন,
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সময় কোনো বিষয় নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনই আসল কথা। তাঁর এই বক্তব্যে আপনার সমর্থন আছে কি?