বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
৮ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

রাজনীতি

নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে বাড়ছে সব দলের রাজনৈতিক চাপ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১৬:২৩

নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে বাড়ছে সব দলের রাজনৈতিক চাপ
নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশার চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পর এর প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলেছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের ভাষণের প্রশংসা করলেও তিনি নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে কিছু না বলায় হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি ও জামায়াত।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত রোববার সর্বপ্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে রাষ্ট্র সংস্কারের নানা বিষয় উল্লেখ করা হলেও নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করলেও নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকায় সমালোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ওই ভাষণে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি, পুলিশ কমিশন গঠন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা, শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার, কৃষি-স্বাস্থ্য-পরিবেশ, পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় সংহতি উন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পতিত সরকারের ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশসহ নানা খাতের সংস্কারের বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় গণতন্ত্র সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা খাত এবং তথ্যপ্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা। যাতে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা হয়। এতে সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করে আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো রোডম্যাপ না দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আর দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে, আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছে, এই ভাষণে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছে তারা। তবে রোডম্যাপ না থাকায় নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরদিন এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। আমরা আশা করেছিলাম যে তিনি নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো রোডম্যাপ দেবেন; কিন্তু ভাষণে তা নেই।’
নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও দ্রুত সংলাপ আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। অতি অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা (প্রধান উপদেষ্টা) রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। একটি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের দায়িত্বভার গ্রহণ করার সুযোগ করে দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাছে আমাদের অনুরোধ হলো, এ দেশের জনগণের স্টেকহোল্ডার হলো পলিটিক্যাল পার্টিগুলো। যদি গণতন্ত্র চান, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে কথা বলুন। সংসদে অতীতে প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে, এই ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্রুত আলাপ করুন। কীভাবে গণতন্ত্র উত্তরণ করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে তাদের কাছ থেকে সুপারিশ গ্রহণ করুন।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়াও বিএনপির মতোই। জাতীয় নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশি সময় নেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল রাজধানীতে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উপযুক্ত সময় দেওয়া উচিত। তবে এটি খুব দীর্ঘ বা খুব কমও হওয়া উচিত নয়।’
এ সময় তিনি নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
বিএনপির যুগপতের মিত্র দলগুলোও প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রশংসা করে বলেছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ আশা করেছিলেন তারা।
ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে দলগুলোর প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না বলায় নানামুখী সংশয়-সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে, ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও এর আগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, তারা খুব শিগগির একটি নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
এ ছাড়া দেড় দশকের শাসনামলে আওয়ামী লীগের সহযোগীর ভূমিকা পালনকারী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাচনের আগে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দু-তিন বছর সময় দেওয়া যেতে পারে বলে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরো খবর