বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা যেটা শুনেছি ৫ আগস্ট গণহত্যা চালিয়ে শেখ হাসিনা যখন হেলিকপ্টারে করে পালাচ্ছিলেন হেলিকপ্টারের পাইলটকে মনে হয় বলেছেন আগরতলা কতদূর, আগরতলা কতদূর।
তার মনে এতটাই সংশয় ছিল জনগণ মনে হয় এবার তাকে আর ছাড় দেবে না। সোমবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৫ আগস্ট সারা ঢাকা শহরে বিস্তার লাভ করেছিল শুধু মানুষের কাফেলা, মানুষের মিছিল। বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত, এক মহানগর থেকে আরেক মহানগর, জেলা সদর প্রত্যেকটি জায়গায় শুধু মানুষ আর মানুষ।
একেবারে শ্রাবণের বর্ষণের মত অবিরামভাবে ঝরছে বিভিন্ন এলাকায় শেখ হাসিনা ওই হেলিকপ্টারেই বুঝতে পেরেছেন আমি জনগণের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে বুঝতে পারিনি। তাই তিনি আকুপাকু করছিলেন কখন আগরতলা যাবো, কখন নিরাপদে নামবো।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দেশকে নির্যাতনের মধ্যে পতিত হতে হয়েছিল যার যে কাজ সেই কাজ তারা করতে পারেনি। তখন ধরেন একজন ভালো ডাক্তার তার মামার শ্বশুর যদি বিএনপি করতো তাহলে তাকে হাসপাতাল থেকে বিদায় করে দেয়া হতো।
কোন একজন ভাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা অত্যন্ত স্মার্ট এবং যোগ্যতা সম্পন্ন তাকে একটা ভালো জায়গা দিলে সরকারেরই লাভ হত কিন্তু তার শালা যদি ছাত্রদল করে থাকে অথবা যদি বিএনপির কোন অঙ্গ সংগঠন করে থাকে তাহলে তার ঠিকানা হয়েছে হয় খাগড়াছড়ি না হয় ওএসডি।
এইভাবে প্রত্যেকটি জায়গায় এমন এক বন্য একদলীয় কর্তব্যবাদী শাসন শেখ হাসিনা কায়েম করেছিলেন সেখানে উপযুক্তদের যে কাজ সেই কাজ তারা করতে পারেনি বা সে কাজটি করার তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রত্যেকটিতে শেখ হাসিনা খুঁজে বেরিয়েছেন তার দলের লোক কারা আছে। তাদেরকেই উচ্চপদে বসিয়ে তাদেরকে দিয়ে সমস্ত অন্যায় করিয়েছেন।
তিনি বলেন, তাদেরকে দিয়ে আয়না ঘর করিয়েছেন, তাদেরকে দিয়ে গুম করিয়েছেন, তাদেরকে দিয়ে ক্রসফায়ার দিয়েছেন। একটা ভয় তাকে সব সময় তাড়া করত বিরোধীদলের অস্তিত্ব থাকা মানেই শেখ হাসিনার পতন কোন না কোন সময় অত্যাসন্ন হয়ে উঠবে। এই ভয় থেকেই বিরোধীদল শূন্য বিএনপি শুন্য একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রাণবন্ত চেষ্টা করেছে শেখ হাসিনা। চেষ্টা করার পর উজার করে দিয়েছেন গ্রামের পর গ্রাম, নগরের পর নগর, জনপদের পর জনপদ।
কেউ তার নিজের এলাকায়, নিজের বাড়িতে থাকতে পারতো না। বছরের পর বছর কেউ ঢাকায় সিএনজি চালিয়েছে, রিকশা চালিয়েছে, কেউ ঢাকায় বাসের কন্টাক্টার হয়েছে। অর্থাৎ নিজের দেশের লোককেই বন্দি করে রেখেছিল শেখ হাসিনা, শুধুমাত্র তার নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। এটা একটা ভয়ংকর ধরনের মানসিক অসুস্থতা থেকে শেখ হাসিনা এই কাজগুলো করেছেন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা চেয়েছে বিচার প্রাঙ্গণে যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিচারপতি থাকতে হবে। যারা ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিল তাদেরকে তিনি পুলিশে ঢুকিয়েছেন তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়েছেন। তারা শেখ হাসিনার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য বিএনপির বড় বড় নেতাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে শারীরিকভাবে টর্চার করা হয়েছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে গণতান্ত্রিক প্রত্যয়ের জন্য আমরা লড়াই করেছি, আমাদের এত লোক শহীদ হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কচি বাচ্চারা যে অকাতরে জীবন দিয়েছে, সুচিন্তিতভাবে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আমরা কোন মিডিয়া ভাঙতে চাই না, কোন মিডিয়া যেন আমাদের দ্বারা আতঙ্কিত না হয়।
মানুষ যেন আমাদের উপরে নির্ভয়ে আস্থা রাখতে পারে। বাংলাদেশে যারা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে যারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানকে বিশ্বাস করে মান্য করে তাদের নীতি আদর্শকে অনুসরণ করে তারা হবে জনগণের একটা নিরাপত্তার বেষ্টনী।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জেলানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সঞ্চালনায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কর্মসূচিতে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।