মোখলেছুর রহমান ( ঢাকা প্রতিনিধি):
বাংলা একাডেমি আজ ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১/২৫শে নভেম্বর ২০২৪ সোমবার বিকেল ৪:০০টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাঃ নায়েব আলী।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)-এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)-এর সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
মোহাঃ নায়েব আলী বলেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ চালচলনের এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন। নানানভাবে তাঁর প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি আমাদের সমাজকে আলোকিত করেছেন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশের অগ্রগণ্য বুদ্ধিজীবী। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাবলম্বিতা নির্মাণে আব্দুর রাজ্জাকের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। তিনি প্রচুর বইপুস্তকের প্রণেতা না হয়েও বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন অপার জ্ঞানতৃষ্ণা এবং চিন্তাশীলতা। তারা বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আব্দুর রাজ্জাক ঔপনিবেশিক কালপরিধির পরিসরে বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্তের বিকাশ নিয়ে অন্তর্দৃষ্টিময় পর্যবেক্ষণ পেশ করেছেন তাঁর গবেষণা এবং মৌখিক বক্তব্য ও আলাপনে।
তিনি ভারতের রাজনৈতিক দল নিয়ে অসাধারণ গবেষণায় এ অঞ্চলের রাজনীতিতে আমলাতন্ত্রের অপ্রতিহত ভূমিকা নিয়ে তাঁর মূল্যবান পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা এখনও আমাদের রাজনীতিতে চলমান আমলাতন্ত্র প্রভাবিত সমস্যাকে সহজে ব্যাখ্যা করতে পারি। বক্তারা আরও বলেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক আমাদের অনেকের প্রত্যক্ষ শিক্ষক না হয়েও অনিবার্য শিক্ষক কারণ তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মের মাঝে জরুরি সব প্রশ্ন ছড়িয়ে দিয়েছেন।
আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ঔপনিবেশিক শাসন এবং তিন রাষ্ট্রগত রূপান্তরের প্রথাগত ইতিহাসকে তাঁর চিন্তা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে পারি। আব্দুর রাজ্জাক গণমানুষের মুক্তির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীভূত ক্ষমতায়ন, উত্তরসূরিতার চর্চা এবং অসহিষ্ণু পরিচায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং সমাজের শক্তি ও মানুষের শক্তিকে রাষ্ট্রের কাঠামোগত শুষ্ক শক্তির চেয়ে বড় করে দেখেছেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন উদারনীতির মূর্ত প্রতীক। তিনি সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে পূর্ণ মূল্য দিয়ে তাঁর সময়কে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ ছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে সংঘটিত উপনিবেশিক আধুনিকতা, ঔপনিবেশিক পশ্চিমায়ন- এসবের সমালোচনা করেও তিনি উপনিবেশের ইতিবাচকতা গ্রহণে কোনো অনুদারতায় ভুগেননি। পাকিস্তান আন্দোলন, বাংলাদেশ আন্দোলন- উভয়ের সমর্থক হয়ে তা স্বীকারে তাঁর কোনো গ্লানি ছিলনা; বরং তাত্ত্বিকভাবে এই অবস্থানকে সমর্থন করে গেছেন সবসময়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর উদ্ভুত জটিল সংকটসমূহের সরল ব্যাখ্যা আমরা তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে হাজির হওয়া নানা সমস্যার সুরাহা করতে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের মতো ত্রিকালদর্শীর শরণাপন্ন হতে হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।