ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে। ফোন কল, ভয়েস মেসেজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—নানা কায়দায় এই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দমনে পুলিশ কঠোর অবস্থান নেওয়ায় এসব পলাতক ব্যক্তিরা পুলিশের ওপর প্রতিশোধের মনোভাব দেখাচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতীয় ফোন নম্বর ব্যবহার করে এই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কার নামে সিম রেজিস্ট্রেশন করা, কোন দেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে—তা জানতে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সূত্র মতে, মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোনে বলা হচ্ছে—“চাকরি থেকে
অবসরে গেলেও তোমাকে দেখে নেওয়া হবে”, “পরিবারকেও ছাড় দেওয়া হবে না”—এ ধরনের ভয় দেখানো হচ্ছে। এতে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি)ও করেছেন।
এক সাম্প্রতিক ঘটনায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থানার এসআই মনির হাসানকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। কলটি পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এসআই মনির জানান, তিনি সন্ত্রাস দমন ও ভাঙচুরের কয়েকটি মামলার তদন্ত করছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পলাতক আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিভিন্ন নম্বর থেকে তাকে হুমকি দেয়। তিনি আরও জানান, হুমকিদাতা ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে—কোটালিপাড়া থানার ইমরান হোসেন রাজিব।
অনেক ক্ষেত্রে ফোনালাপ রেকর্ড করে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ আরও চাপের মুখে পড়ে। এতে মনস্তাত্ত্বিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা।
মনোবিজ্ঞানী ড. সৈয়দ তানভীর রহমান বলেন, এ ধরনের হুমকি মানসিক চাপ বাড়ায়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে চাপ কমে যায়। সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, “হুমকি দেওয়া একটি ক্রিমিনাল অফেন্স। এসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা উচিত।”
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন নই। মামলা নেওয়ার মতো বিষয় হলে মামলা হয়, জিডির ভিত্তিতে তদন্ত হয়। ভারতীয় সিমের বিষয়টি জানার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে।”
পুলিশের মতে, পলাতক আওয়ামী লীগের এই ধরনের সন্ত্রাসী আচরণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, যা শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।