প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি উপযোগী ও নিরাপদ ভোটিং পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। কারিগরি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) অনুষ্ঠিত ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটদান পদ্ধতি নির্ধারণের ওয়ার্কশপ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিইসি।
কর্মশালায় ৮০ জন বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, আইনবিদ, ডাটাবেইজ ও সাইবার নিরাপত্তা বিশারদসহ অন্তত ৮০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। কর্মশালায় চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারীরা প্রবাসীদের ভোটাধিকার কার্যকর করতে সম্ভাব্য প্রযুক্তি, নিরাপত্তা, আইনি কাঠামো ও বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
সিইসি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রায় এক কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশিকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। এটি শুধুমাত্র একটি সাংবিধানিক অঙ্গীকার নয়, বরং প্রবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার অংশ।”
কীভাবে ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে?
ইসি সূত্র জানায়, প্রবাসী ভোটারদের জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, বায়োমেট্রিক যাচাই, ডিজিটাল ভোটিং প্ল্যাটফর্ম (ই-ভোটিং) এবং নিরাপদ প্রেরণব্যবস্থা—এই চারটি ধাপে প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হতে পারে।
বর্তমানে প্রবাসীরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারলেও, নিজের অবস্থান থেকে ভোট দিতে পারেন না। তাদের দেশে এসে ভোট দিতে হয়। এই বাস্তবতা অনেককেই ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা
ভারত, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ডাক ভোট (Postal Voting), ইন্টারনেট ভোটিং (i-voting) এবং দূতাবাসভিত্তিক ভোটিং বুথ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও এসব দেশের মডেল বিশ্লেষণ করে একটি নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনায় রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রবাসীদের ভোট প্রদান প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপত্তা, পরিচয় যাচাই, তথ্য সংরক্ষণ ও ভোটের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা। এছাড়া, ভিন্ন দেশে ভিন্ন আইন, সময়মত ভোট পাঠানো এবং সুষ্ঠু গণনার ব্যবস্থাপনাও একটি জটিল দিক।
তবে, সিইসি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা পিছিয়ে থাকবো না। প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা সফলভাবে এটি বাস্তবায়ন করবো।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়াসহ বড় প্রবাসী অধ্যুষিত কয়েকটি দেশে পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই ভোটিং ব্যবস্থা চালু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য দেশেও এটি সম্প্রসারণ করা হবে।
ইসি’র সিনিয়র সচিব জানান, খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম (পাইলট প্রকল্প) ঘোষণা করা হতে পারে। এছাড়া, এ বছরের মধ্যেই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ভোটিং পদ্ধতির কাঠামো প্রকাশ করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হলে দেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো এই জনগোষ্ঠী আরও সম্পৃক্ততা অনুভব করবে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?