বাংলাদেশের মংলা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা এখন আর ঢেকে রাখার কিছু নেই—দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব বিস্তারের যে সুবর্ণ সুযোগ ভারতের সামনে ছিল, তা চীনের কৌশলগত অগ্রযাত্রার কাছে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (IPGL) এই প্রকল্প থেকে গুটিয়ে নেয় নিজেদের অবস্থান। তখন থেকেই চুপচাপ বসে থেকেছে দিল্লি, কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি কিংবা আগ্রহের প্রতিফলন ঘটেনি। অথচ এই বন্দরের আধুনিকায়ন ছিল দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার রূপে ভারতের জন্য একটি কৌশলগত ‘গেম-চেঞ্জার’ হওয়ার মতো সম্ভাবনাময় প্রকল্প।
এই শূন্যতাকেই সফল কৌশলগত কূটনীতি দিয়ে কাজে লাগিয়েছে চীন। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ চীনের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের (CCCC) সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি স্বাক্ষর হয়—যা দিল্লির আঞ্চলিক কৌশলগত অবস্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ভারতের অনাগ্রহ এবং দেরিতে সাড়া দেওয়া কূটনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা প্রমাণ করেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের সক্রিয় ও নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতিকে ঠেকানোর মতো সক্ষমতা আজ তাদের নেই। ভারত যখন কেবল ইচ্ছার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করেছে, ঠিক তখন অন্তর্বর্তী সরকার চীনের সঙ্গে সরাসরি কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছে গেছে।
৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মংলা বন্দর পরিণত হবে স্বয়ংক্রিয়, পরিবেশবান্ধব আধুনিক ‘গ্রিন পোর্ট’-এ। নির্মাণের কাজ শুরু হবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এতে দুটি নতুন কন্টেইনার জেটি, অটোমেটেড কনটেইনার হ্যান্ডলিং সিস্টেম এবং কোল্ড পোর্টে রূপান্তরের মতো কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাকাত হোসেন বলেন, “আমরা অনন্তকাল ভারতের অপেক্ষায় বসে থাকতে পারি না। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর প্রকল্পের অর্থ ছাড় দ্রুত হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, মংলা বন্দরে ভারতের দেরি ও দুর্বল কূটনীতি চীনের জন্য বড় জয় এবং ভারতের জন্য কৌশলগত ব্যর্থতার প্রতীক। এই বন্দরের উন্নয়নের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিপণ্য রপ্তানি যেমন চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে, তেমনি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের অর্থনৈতিক ভিত্তি হবে আরও মজবুত।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়োপযোগী, দূরদর্শী ও বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত কেবল একটি বন্দর উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি এক রকম আঞ্চলিক ভূ-কৌশলগত বার্তা। ভারত যেখানে কথার খেলায় মগ্ন ছিল, সেখানে চীন কার্যকর অংশীদার হয়ে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে।
এই বাস্তবতা এখন ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন করে মূল্যায়নের আহ্বান জানাচ্ছে—দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্য যে আর একমুখী নয়, সেটিই আজকের মংলা চুক্তির সবচেয়ে বড় বার্তা।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?