চীনে চার দিনের সফল সরকারি সফর শেষে শনিবার রাতে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার নিশ্চিত করেছেন যে, সফল সফর শেষে শনিবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ড. ইউনূস।
এই সফরকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নে অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সফরের শেষদিনে বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ড. ইউনূসকে বিদায় জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চিফ প্রটোকল অফিসার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী হং লেই। এই সফরে চীন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার ব্যাপারে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৬ মার্চ চীন সফরে যান। এরপর বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) মহাসচিবের আমন্ত্রণে তিনি ২৬ ও ২৭ মার্চ হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত বিএফএ বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এ যোগ দেন। এই সম্মেলনের সাইডলাইনে তিনি চীনের স্টেট কাউন্সিলের ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েশিয়াং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন।
চীন সরকারের আমন্ত্রণে ২৭ থেকে ২৯ মার্চ তিনি বেইজিং সফর করেন। ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ড. ইউনূস। উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতবিনিময় হয়।
বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে, অর্থনীতি, পানি ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্য প্রদান এবং তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান। শনিবার সকালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ড. ইউনূসকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এই সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, পরিষদ চেয়ারম্যান হে গুয়াংচাইসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও শক্তিশালী করতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। এই সম্মাননা কেবল আমার নয়, বরং বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।”
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সেখানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটি দল তাকে স্বাগত জানায়। এছাড়া, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠকও করেন এবং দুই দেশের শিক্ষাবিদদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. ইউনূসের এই সফর চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও গভীর করবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিশেষত, চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে তার বৈঠক এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বক্তব্য দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চীন সফরের এই সাফল্যের পর ড. ইউনূস এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে চীন সরকারের সমর্থনকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?