প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের বিস্তৃত নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য চীনের কাছ থেকে পঞ্চাশ বছরের একটি মাস্টারপ্ল্যানের আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার বেইজিংয়ের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রী লি গোইয়িং-এর সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এই অনুরোধ জানান।
অধ্যাপক ইউনূস চীনের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে বলেন, চীন তাদের পানি সমস্যার সমাধানে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি চীনা মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনাদের যে সমস্যা রয়েছে, আমাদেরও সেই একই সমস্যা। তাই, যদি আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেন, তাহলে আমরা খুশি হব।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ অঞ্চল। আমাদের দেশ শত শত নদীর পানি দিয়ে ঘেরা। পানি আমাদের জীবন দেয়, তবে কখনো কখনো এটি শত্রুতে পরিণত হয়। এখন জনসংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। নদী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যেন আমাদের পরিবেশের ক্ষতি না হয়।”
অধ্যাপক ইউনূস চীনকে পানি ব্যবস্থাপনার মাস্টার হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে।” তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আপনাদের কাছ থেকে শেখার জন্য এখানে এসেছি। কীভাবে আমরা পানি সম্পদকে জনগণের জন্য উপযোগী করে তুলতে পারি।”
তিনি উল্লেখ করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের চাহিদার কারণে নদীর তীরবর্তী ভূমিগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। একই ধরনের চাহিদা ভারতের উজান অঞ্চলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া পলি জমার কারণে নদীগুলোর মাঝখানে নতুন ভূমি তৈরি হচ্ছে, যা কখনো কখনো নদীগুলোর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটায়।
চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রী লি গোইয়িং স্বীকার করেন যে, চীন ও বাংলাদেশ পানি ব্যবস্থাপনায় একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি বলেন, “চীনের জন্যও পানি ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে থাকব।”
মন্ত্রী আরও জানান, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চীনের জন্য একটি বিস্তৃত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছেন, যা দেশটির পানি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা এই অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করতে প্রস্তুত।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের সমস্যা শুধু একটি নির্দিষ্ট নদীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই আমরা একটি পরিকল্পনা প্রণয়নে আপনাদের সহায়তা চাই।”
তিনি বিশেষভাবে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকার চারপাশের দূষিত পানি পরিষ্কারের বিষয়ে চীনের সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা চীনে চার দিনের সফরে রয়েছেন। এই সফরের অংশ হিসেবে তিনি চীনের নেতৃবৃন্দ ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. ইউনূসের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বিশেষত, চীনের উন্নত প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নদীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?