জাতিসংঘ তাদের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা বাতিল করেছে। আগামী এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের মাসিক খাবারের বরাদ্দ কমিয়ে জনপ্রতি ৬ ডলারে নামানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও, তা আর কার্যকর করা হবে না। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) নিশ্চিত করেছে যে, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা আগের মতোই জনপ্রতি মাসিক ১২ মার্কিন ডলার বরাদ্দ রাখা হবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজ এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক ১২ মার্কিন ডলার এবং ভাসানচরে অবস্থানরতদের জন্য ১৩ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ডব্লিউএফপি এক চিঠির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তহবিল সংকট সত্ত্বেও খাদ্য সহায়তার পরিমাণ কমানো হবে না। উল্লেখ্য, ডব্লিউএফপি এর আগে তহবিল সংকটের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য এপ্রিল থেকে মাসিক খাবারের বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে জনপ্রতি ৬ ডলারে নামানো হবে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়।
চলতি মাসের ৫ তারিখে ডব্লিউএফপি’র পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা কমানোর বিষয়ে আরআরআরসি কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার পরিমাণে কোনো পরিবর্তন করা হবে না।
বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের পর কয়েক মাসের ব্যবধানে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডব্লিউএফপি’র এই সিদ্ধান্ত মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে একইসঙ্গে তারা আশঙ্কা করছেন যে, তহবিল সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হলে এই সমস্যা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদান ও দীর্ঘমেয়াদী সংকট সমাধানে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
এই সংকট সমাধানে ডব্লিউএফপি’র এই সিদ্ধান্ত সাময়িক স্বস্তি দিলেও, এর স্থায়ী সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সুসংগঠিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?