সংস্কার আগে না নির্বাচন, এমন প্রশ্নে কোনো ধরনের চাপ নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকাল ১০টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংসদ ভবনে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার এবং ক্ষমতার ভারসাম্য। কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী পদে অবাধ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়, তখন রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। তার মতে, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া একটি প্রকৃত জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী পদে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতা বিরাজমান। সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাহী ক্ষমতা প্রায় এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত হয়েছে, যার ফলে সংসদ, বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরভাবে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বিরোধী দলের মতামত উপেক্ষিত হয় এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব দেখা দেয়।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংসদীয় ব্যবস্থার অন্যতম কাজ হলো সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের সংসদ কার্যকর বিরোধী দলের অভাবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্তের জায়গায় পরিণত হয়েছে।
একইভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কারণ উচ্চ আদালতেও রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষ করা যায়। আলী রীয়াজের মতে, যদি বিচার বিভাগ ও সংসদ স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর অবাধ ক্ষমতা রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
প্রধানমন্ত্রীর হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা থাকার ফলে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ দলীয় স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা।
আলী রীয়াজের মতে, প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকলে তা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় এবং সাধারণ জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে একক ক্ষমতার পরিবর্তে সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি কার্যকর হয়।
২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা: রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
৩. সংসদের কার্যকারিতা বাড়ানো: বিরোধী দলকে যথাযথ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে, যাতে সংসদে প্রকৃত অর্থে বিতর্ক ও নীতিনির্ধারণ সম্ভব হয়।
৪ . গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা: মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম এবং শক্তিশালী নাগরিক সমাজ ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
উপসংহার
এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার ফলে রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা হ্রাস পায় এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়ে। আলী রীয়াজের মতে, প্রধানমন্ত্রী পদে অবাধ ক্ষমতা রেখে জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন ক্ষমতার ভারসাম্য, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?