প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। আগামী সোমবার (১৭ মার্চ) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (১৬ মার্চ) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পুলিশের বিভিন্ন স্তরের ১২৭ জন শীর্ষ কর্মকর্তা এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এতে দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, এই বৈঠকে দেশের সব জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), রেঞ্জ ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক), সব মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সদর দপ্তরের তিনজন ডিআইজি, সব অতিরিক্ত আইজিপি ও আইজিপি উপস্থিত থাকবেন। এটি হবে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। ধারণা করা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, বিচারপ্রক্রিয়ায় পুলিশের ভূমিকা, সন্ত্রাস দমন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বৈঠকে স্থান পাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এই বৈঠকের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বৈঠকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের ভূমিকা আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করার পরিকল্পনা নিতে পারে। ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধ, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বশীলতা বাড়ানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাহিনীকে কঠোর বার্তা দেবেন এবং জনবান্ধব ও নিরপেক্ষ প্রশাসন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিক্ষোভ, সহিংসতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পুলিশ বাহিনীকে আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ, দুর্নীতিমুক্ত ও পেশাদার করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, অতীতে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই প্রধান উপদেষ্টা কী ধরনের নির্দেশনা দেবেন, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ জনগণেরও কৌতূহল রয়েছে। পুলিশের মধ্যে কোনও দুর্নীতি, অপব্যবহার বা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
এ বৈঠকে আরও আলোচনা হতে পারে পুলিশের দায়িত্বশীলতা, দ্রুত বিচার ব্যবস্থা চালু করা, মিথ্যা মামলা ও হয়রানি বন্ধ করা এবং জনগণের সঙ্গে পুলিশের সুসম্পর্ক গড়ে তোলা নিয়ে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন নীতিমালায় পুলিশের কার্যক্রম আরও জবাবদিহিমূলক করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা এই বৈঠকে আরও পরিষ্কার হতে পারে। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারেন এবং কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারেন, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বৈঠকের পরপরই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা ও পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হতে পারে। বিশেষ করে, দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সরকার কী ধরনের সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে, সেটিও বৈঠকের মাধ্যমে স্পষ্ট হতে পারে। ৫ আগস্টের পর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই প্রধান উপদেষ্টা কী বার্তা দেবেন, সেটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
এ বৈঠককে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক মহল, আইনশৃঙ্খলা বিশ্লেষক ও সাধারণ জনগণের গভীর দৃষ্টি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা কী বার্তা দেবেন, পুলিশ প্রশাসনে কী পরিবর্তন আসবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে বৈঠকের পরই। এটি বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?