অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৬ মার্চ চার দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন। এই সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও গভীর ও কৌশলগত উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অধ্যাপক ইউনূস ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বৈঠক করেছেন। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
প্রেস সচিব বলেন, “এই সফরের সময় ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র (ম্যানুফেকচারিং হাব) হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে চীনের কারখানাগুলোর বাংলাদেশে স্থানান্তর করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”
সফরসূচি অনুযায়ী, ২৬ মার্চ চীনে পৌঁছাবেন অধ্যাপক ইউনূস। ২৭ মার্চ তিনি চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। বিএফএকে বলা হয় ‘প্রাচ্যের দাভোস’, যেখানে এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেন।
প্রেস সচিব বলেন, “এই সম্মেলনের ফাঁকে চীনের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।”
তিনি আরও জানান, সফরকালে অধ্যাপক ইউনূস পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করবেন এবং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে। এছাড়া তিনি চীনের হাইটেক পার্ক ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করবেন।
বাংলাদেশে চীনের কারখানা স্থানান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চীনের সাথে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে চান অধ্যাপক ইউনূস। বাংলাদেশ চীনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বিনিয়োগ গন্তব্য হতে পারে।”
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির প্রেক্ষাপটে এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।”
প্রেস সচিব আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য চীনের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তর করতে উদ্বুদ্ধ করা। ইতোমধ্যে, গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে দুইটি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করেছে এবং সোলার এনার্জিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “চীনের সোলার কোম্পানিগুলো ট্রেড প্রোটেকশনের কারণে অনেক জায়গায় বিনিয়োগে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে তারা কোনো বাধা ছাড়াই বিনিয়োগ করতে পারবে।”
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানো, চীনের হাসপাতাল চেইনগুলোর যৌথ বিনিয়োগ, এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পাবে বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, “৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর চীনের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে। আমরা আশা করছি, এই সফরের পর আরও চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে।”
অধ্যাপক ইউনূসের এই সফরকে বিশ্লেষকরা চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন। এই সফর কীভাবে বাংলাদেশের শিল্প খাত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামো এবং বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?