ধর্ষণ একটি ভয়াবহ অপরাধ, যা শুধুমাত্র ভুক্তভোগীর জীবনকেই ধ্বংস করে না, বরং পুরো সমাজের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধর্ষণের ঘটনায় বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অনেকেই মনে করেন, প্রচলিত বিচারব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর নয় এবং ধর্ষকদের জন্য কঠোর শাস্তি না থাকায় তারা বারবার একই অপরাধ করে। এজন্য অনেকে দাবি করছেন, ধর্ষকদের প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে তারা আর কখনো এমন ঘৃণ্য অপরাধ করতে সাহস না পায়।
কঠোর শাস্তির পক্ষে যুক্তি
১. ভয় ও প্রতিরোধ সৃষ্টি: অনেকের মতে, ধর্ষকদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে সমাজে একটি শক্তিশালী বার্তা যাবে যে, এ ধরনের অপরাধের জন্য কোনো ছাড় নেই। এটি অন্য অপরাধীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে এবং তারা অপরাধ করার আগে দুইবার চিন্তা করবে।
বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা এড়ানো: প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় ধর্ষণ মামলার বিচার দীর্ঘ সময় নেয় এবং অনেক সময় ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার পান না। প্রকাশ্যে দ্রুত শাস্তি কার্যকর করলে বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা বাড়তে পারে।
ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা : ধর্ষণের শিকার নারীরা অনেক সময় সামাজিক লজ্জা, ভয় ও হুমকির কারণে ন্যায়বিচার পান না। প্রকাশ্যে শাস্তি কার্যকর হলে ভুক্তভোগী এবং তার পরিবার মনস্তাত্ত্বিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
কঠোর শাস্তির বিপক্ষে যুক্তি
১. আইনের শাসনের পরিপন্থী: প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া যদি আইনসম্মত না হয়, তবে এটি এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। বিচারব্যবস্থা প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে না, কিন্তু জনমতের ভিত্তিতে যদি প্রকাশ্যে শাস্তি কার্যকর করা হয়, তাহলে ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি থেকে যায়।
সহিংসতার সংস্কৃতি তৈরি: সমাজে যদি প্রকাশ্যে কঠোর শাস্তির প্রচলন হয়, তবে এটি জনসাধারণের মধ্যে হিংস্রতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ভবিষ্যতে অন্য অপরাধের ক্ষেত্রেও মানুষ নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখাতে পারে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সবসময় বলছে, প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড বা কঠোর শাস্তি দেওয়া নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একজন অপরাধীর মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। এছাড়া, যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি ভুলভাবে অভিযুক্ত হন, তবে তাকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া হলে পরবর্তীতে সেই ভুল আর সংশোধনের সুযোগ থাকবে না।
প্রকাশ্যে শাস্তির দাবির পেছনে জনগণের মূল চাহিদা হলো কার্যকর ও দ্রুত বিচার। তাই ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্তের গতি বাড়ানো, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, ভুক্তভোগীদের জন্য নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
সর্বোপরি, কেবল কঠোর শাস্তি দিলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। অপরাধ প্রতিরোধে শিক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সংস্কার প্রয়োজন। ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি, যার সমাধান শুধুমাত্র কঠোর শাস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?