অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেছেন, তিনি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেন যেখানে শিক্ষার্থীরা দেশের ভেতরেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পারবে এবং বাংলাদেশ থেকেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। তিনি স্বীকার করেন যে, এই পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়—একদিনে, এক বছরে, এমনকি পাঁচ বছরেও নয়। তবে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বুধবার উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সচিবালয়ে দায়িত্ব গ্রহণের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আমরা কখনো ভাবিনি যে, আমাদের জীবদ্দশায় এভাবে মুক্তভাবে কথা বলার সুযোগ পাব। প্রধান উপদেষ্টা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, এটি নিঃসন্দেহে বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি নিজেও বলেছেন, সামনের পথ সহজ হবে না, বরং কঠিন হবে। তবে এটি মোকাবিলা করতেই আমি এসেছি।”
শিক্ষাখাতকে একটি বিশাল ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সবাই জনগণের টাকায় বড় হয়েছি। ফলে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে জনগণের প্রতি। শিক্ষা এমন একটি ক্ষেত্র, যা শুধু চাকরি বা কর্মসংস্থানের জন্য নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের মূল চালিকাশক্তি।”
নতুন দায়িত্ব গ্রহণের প্রসঙ্গে সি আর আবরার বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি যে, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে এসে দায়িত্ব পালন করব। তবে আমি মনে করি, শিক্ষা হলো এমন একটি মাধ্যম, যা ব্যক্তির কর্মদক্ষতা অর্জন, আত্মোন্নয়ন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে সহায়ক এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির অন্যতম উপায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমন হতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের শুধু পুঁথিগত বিদ্যা দেবে না, বরং তাদের বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুত করবে। আমরা চাই, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিলেও দেশে ফিরে এসে কাজ করবে এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এজন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং গবেষণা কার্যক্রমে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।”
নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা স্বীকার করেন, শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান চিত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পাঠ্যক্রমে আধুনিকীকরণ, দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার, বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে তার অন্যতম অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ হোক, যেখানে শিক্ষার্থীরা দেশের মধ্যেই সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা পাবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ইতোমধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের উপযোগী শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হলে শুধু নীতিমালা নয়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য সরকার, শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক এবং সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে এমন, যা ছাত্রদের শুধু চাকরির পেছনে ছোটার মানসিকতা থেকে বের করে এনে উদ্ভাবনী চিন্তা ও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা খাত সংস্কারের প্রচেষ্টার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ বিকাশের সুযোগ পাবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, শিক্ষাকে একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা, যা বৈষম্য দূর করবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বেশ কিছু নীতিগত সংস্কারের কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রমের প্রসার, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী দক্ষতা অর্জনের বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা তার বক্তব্যের শেষে বলেন, “আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে শিক্ষার মান হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার উপযোগী, যেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু চাকরি প্রত্যাশী হবে না, বরং চাকরি সৃষ্টিকারী উদ্যোক্তায় পরিণত হবে।”
এই দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনার আলোকে নতুন শিক্ষা উপদেষ্টার নেতৃত্বে শিক্ষাখাতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছে দেশের শিক্ষা মহল।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?