রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের টহল কার্যক্রম আকস্মিক পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বুধবার ভোররাতে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মোড়, চেকপোস্ট এবং কয়েকটি থানা ঘুরে দেখেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বারিধারার ডিওএইচএস বাসা থেকে বের হয়ে বনানী মোড়, বিজয় সরণি (নভোথিয়েটার), মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কলাবাগান, ইডেন কলেজ হয়ে নিউমার্কেট থানা পরিদর্শন করেন। এরপর শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, মগবাজার, হাতিরঝিল, পুলিশ প্লাজা হয়ে গুলশান থানায় যান। তিনি গুলশান থানা থেকে ইউনাইটেড হাসপাতাল হয়ে বারিধারার বাসভবনে ফিরে আসেন। পরিদর্শনের সময় তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও আশপাশের অলিগলিও ঘুরে দেখেন, যেখানে ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে।
পরিদর্শনের সময় উপদেষ্টা থানা ও চেকপোস্টে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন এবং বলেন, “রাজধানীর প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি সহ্য করা হবে না।”
এছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, যেন প্রতিটি চেকপোস্টে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের সঠিকভাবে তল্লাশি করা হয় এবং কোনো ধরনের অনিয়ম বা গাফিলতি বরদাশত না করা হয়। তিনি আরও বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে, যাতে জনগণ নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারে। রাতের বেলা ছিনতাই বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কোনো অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী নিপীড়ন ও সহিংস অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ঢাকার ব্যস্ততম এলাকায় জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই দাবি করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বিগত কয়েক মাসে কিছু চক্র আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। আমরা এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেব না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিন-রাত কাজ করছে এবং অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জনগণের আতঙ্ক দূর করতে নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। তিনি জানান, এ ধরনের আকস্মিক পরিদর্শন আরও চালানো হবে এবং পুলিশের দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের অবহেলা থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী সংগঠন ও সাধারণ পথচারীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, তারা মনে করেন শুধু আকস্মিক পরিদর্শন যথেষ্ট নয়, বরং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি কার্যকরী পরিকল্পনা প্রয়োজন। বিশেষ করে রাতে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় পুলিশের বিশেষ টহল ব্যবস্থা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন অনেকে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই উপদেষ্টার এই পরিদর্শনকে অনেকে ‘প্রশাসনের ঘুম ভাঙানোর প্রয়াস’ হিসেবে দেখছেন। তবে এটি কেবল লোক দেখানো কার্যক্রম না হয়ে বাস্তবিক আইনশৃঙ্খলা উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?