হজযাত্রীদের জন্য সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করতে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার চালুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনায়’ হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির এক বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সভায় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা হজ ব্যবস্থাপনা সহজ, স্বচ্ছ ও নিরাপদ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “হজ পালন সহজ করতে আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিয়েছেন; আমাদের উচিত সেই সুযোগকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো। একজন হজযাত্রীও যেন কোনো দুর্ভোগের শিকার না হন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।”
হজ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে হজ এজেন্সিগুলোর দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে একটি বুকলেট আকারে প্রকাশ করার নির্দেশ দেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকারের দায়িত্ব হলো এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করা। যদি কোনো এজেন্সি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হজযাত্রীদের যেকোনো জটিলতা থেকে রক্ষা করতে একটি হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “একটি কল সেন্টার চালু করা হবে, যেখানে যেকোনো অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে মনিটরিং করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে, যেখানে হজযাত্রীরা যুক্ত থাকতে পারবেন, অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং কেউ হারিয়ে গেলে দ্রুত অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হবে।”
নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই বিষয়ে একটি বিশেষ গাইডলাইন তৈরি করা উচিত।”
হজ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বহীনতা প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যে কোনো এজেন্সি যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। দায়িত্বশীলতা বাড়াতে এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম ও দক্ষতা যাচাই করে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে হবে।”
হজযাত্রীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে বিশেষ ভিডিও গাইডলাইন তৈরির নির্দেশ দেন তিনি। এতে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে হজযাত্রীরা সহজেই জানতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ভিডিওতে দেখাতে হবে, অসুস্থ হয়ে গেলে কী করতে হবে, হারিয়ে গেলে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে, কোরবানি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে কী ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে হজযাত্রীরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবেন।”
আগামী বছর থেকে ‘হজ ক্রেডিট কার্ড’ চালুর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এটি চালু করা হলে হজযাত্রীদের আর্থিক লেনদেন সহজ হবে এবং যাত্রা আরও নির্বিঘ্ন হবে। দেশে ফেরার পর অব্যবহৃত অর্থ নগদ ফেরত দেওয়া হবে।”
হজযাত্রীদের লাগেজ হারানোর ঘটনা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “চেক-ইনের পর প্রতিটি লাগেজের ট্যাগের একটি কপি সংরক্ষণ করা হবে এবং হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে রাখা হবে, যাতে লাগেজ হারিয়ে গেলে দ্রুত শনাক্ত করা যায়।”
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজের নিবন্ধন করেছেন। তবে সরকার এ বছর সরকারি খরচে কাউকে হজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার প্রস্তুতি চলছে, যা হজযাত্রীদের জন্য আরও স্বচ্ছ, সহজ ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করবে।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?