দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার অবশ্যই করা দরকার এবং সরকার সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
সেনাপ্রধান বলেন, আমি যতবারই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি সম্পূর্ণ আমার সঙ্গে একমত। তাদের উচিত একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করা, যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। আমি আগেও বলেছি, ১৮ মাসের মধ্যে একটি নির্বাচন দেওয়া উচিত এবং আমার বিশ্বাস সরকার সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার জাতীয় শহীদ সেনা দিবসে রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে পিলখানা হত্যাকাণ্ড স্মরণে আয়োজিত বিশেষ এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
সেনাপ্রধান স্পষ্ট করেন যে, আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। আমার একটাই লক্ষ্য— দেশ ও জাতিকে সুন্দর একটি স্থিতিশীল অবস্থানে রেখে সেনানিবাসে ফিরে যাওয়া।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে তিনি বলেন, আজ পুলিশ সদস্যরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না, কারণ তাদের অনেকেই কারাগারে রয়েছে। র্যাব ও বিজিবি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনীর নয়। আনসার বাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোরও ভূমিকা রয়েছে। মাত্র ৩০ হাজার সেনা সদস্য দিয়ে পুরো দেশ সামলানো অসম্ভব। এই বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে।
সেনাপ্রধান বলেন, আমরা যদি নিজেদের মধ্যে কাদা-ছোড়াছুড়ি করি, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করি, তাহলে অপরাধীরা এই সুযোগ নেবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে সম্মিলিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি আজ স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি, যেন পরে কেউ বলতে না পারে যে আমি সতর্ক করিনি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, দেশ ও জাতির স্বার্থে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। আমাদের এখন ঐক্যের প্রয়োজন, বিভক্তি নয়।
সেনাবাহিনীর ওপর অহেতুক আক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু মানুষ সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সাহায্য করুন, আক্রমণ নয়। আমরা গঠনমূলক পরামর্শ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আমরা দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে চাই, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে দিন।
সেনাপ্রধানের বক্তব্য স্পষ্ট করেছে যে, সেনাবাহিনী দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকারকে সহায়তা করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব বাহিনীর একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?