পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঘোষণা করেছেন যে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রকল্প নিয়ে ২০১৬ সালে চীনের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল, তা সম্পর্কে এখনো তিস্তাপাড়ের জনগণ সঠিকভাবে অবগত নয়। চীন শুরুতে এই পরিকল্পনার দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও এখন তারা বাস্তবায়নের জন্য আরও দুই বছর সময় চেয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এই সময় দিতে রাজি হলেও শর্ত দিয়েছে যে, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে নদীপাড়ের মানুষের মতামত নেওয়া হবে এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা রেলসেতু এলাকায় অনুষ্ঠিত তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক গণশুনানিতে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ভারত যখনই তিস্তার বাঁধ খুলে দেয়, তখন তা আগেভাগে না জানানোয় নদী তীরবর্তী মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ কমে যায়, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার বারবার ভারতকে জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও জানাবে, যাতে বাঁধ খুলে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে যথাযথভাবে সতর্ক করা হয়।
তিনি আরও জানান, তিস্তার ৪৫ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনপ্রবণ। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিলম্বের কারণে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে, যা আসন্ন বর্ষায় আরও তীব্র হতে পারে। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোর টেন্ডার চূড়ান্ত করা হবে এবং সেই অনুযায়ী নকশা অনুমোদন করে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে আর কোনো বিলম্ব করা যাবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো নদী ভাঙন রোধ করা, পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নদীপারের বাসিন্দাদের সুরক্ষা প্রদান করা। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
তিস্তাপারের মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যখন অন্তবর্তীকালীন সরকার থাকবে না, তখন আমিও উপদেষ্টা থাকবো না। সেই সময় আমি আপনাদের কাতারে অতীতের মতো দাঁড়াবো এবং আওয়াজ তুলবো, যাতে এই সময়ের করা ভিত্তির উপর থেকে সেই সময়ের সরকার কাজ করতে পারে।
একই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, বিগত সরকার নতজানু পরাষ্ট্রনীতির কারণে তিস্তা সমস্যার কথা বলতে পারেনি ভারতের কাছে। মাথা উঁচু করে বর্তমান সরকার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করবে।
তিনি বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে একটি খসড়া নিয়ে বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদী সরকার ভারতকে অনেক দিয়েছে। কিন্তু কিছুই আদায় করতে পারেনি। এ সময় তিনি চরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে হিমাগার স্থাপনসহ উত্তরে বিগত সময়ে বৈষম্যের বিষয়টি নজরে রেখে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার বলে জানান।
তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক গণশুনানিতে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম তারিকুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আতিক মুজাহিদ, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ।
এর আগে সকাল থেকে এই গণশুনানিতে অংশ নিতে রংপুরসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের তিস্তাপারের মানুষজন আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নামে নদীপারের এই আয়োজনে। গণশুনানিতে অংশ নেওয়া মানুষজন বলেন, শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঝুঁলিয়ে রাখা নয়, বরং বর্তমান সরকারের আমলেই এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চান তারা।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?