চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে, যেখানে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, গাজীপুরে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের কাজ। এর প্রতিবাদেই তারা চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন।
সমাবেশের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতীকী গায়েবানা জানাজা আদায় করেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ছয় মাস পার হয়ে গেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংগঠিত বিভিন্ন সহিংসতার বিচার হয়নি। এখনো দেশের শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হচ্ছে, অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা অভিযোগ করেন, হাতিয়া, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে, যা বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, “এই সরকার বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ছয় মাস পার হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করা হয়নি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাই আমরা আজ চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।”
বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ‘সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না’, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর’, ‘ছাত্রদের রক্ত বৃথা যাবে না’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশ শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কর্মসূচি শেষ করেন।
সংগঠনটির চট্টগ্রামের সমন্বয়ক জোবায়েরুল আলম মানিক বলেন, “আমরা খুনি আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”
বিক্ষোভ সমাবেশের সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন। কিন্তু বিক্ষোভ মিছিলের কারণে তার গাড়ি কিছুক্ষণ রাস্তায় আটকে যায়। পরে তিনি হেঁটেই প্রেসক্লাবে প্রবেশ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা বলেন, বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নেতারা বলেন, “আমরা বিচার চাই, অন্যথায় দেশের ছাত্রসমাজ রাস্তায় নামবে এবং স্বৈরাচারী সরকারকে প্রতিহত করবে।”
ছাত্রনেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই আন্দোলন শুধু চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস ও রাজপথে ছড়িয়ে পড়বে। তারা সরকারকে দ্রুত বিচারের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় আরও বড় আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব এলাকায় এসে শেষ হয়।