শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

পরীক্ষামূলক সংস্করণ

জাতীয়

‘১৬ লাখ কোটি টাকার বেশিরভাগই পাচার করেছে হাসিনা সরকার’

৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশে একটি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সাড়ে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে গেড়ে বসা নিকৃষ্ট-অপশাসক সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে। ঐদিন দুপুরে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণসংক্রান্ত হাইকোর্টের […]

নিউজ ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:৫৬

৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশে একটি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সাড়ে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে গেড়ে বসা নিকৃষ্ট-অপশাসক সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে। ঐদিন দুপুরে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে দেশের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন সরকার-পতনরে এক দফা সংগ্রামে পর্যবসিত হয়েছিল ১৭ জুলাই তারিখে।

আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ অভিহিত করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উক্তি কোটা-সংস্কার আন্দোলনকে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি-ছাত্রদলসহ অন্যান্য দলকে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করেছিল! ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে সহিংস প্রক্রিয়ায় আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা চললেও ক্রমেই আন্দোলনটি গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল, যার পরিণতিতে প্রাণভয়ে পালাতে হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে। বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। এটা অনস্বীকার্য যে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী গণতন্ত্রকে বরবাদ করে দিয়ে আওয়ামী লীগেই গণঅভ্যুত্থানে সরকার উৎখাতকে ডেকে এনেছেন। ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনকে অসম্ভব করে দেওয়ার পরিণতি হয় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাত অথবা দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্যকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যেখানে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। আর সবচেয়ে খারাপ পরিণতি হলো স্বৈরাচারী একনায়ককে হত্যা করা।

গত ১৬ বছরে হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার একনায়কত্বকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়নি। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া সত্ত্বেও এই গণঅভ্যুত্থান অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ঢাকা থেকে উড়াল দেয় তখন লাখ লাখ মানুষের মিছিল ঢাকার বিভিন্ন রাজপথ ধরে গণভবন ও সংসদ ভবনের দিকে ধাবিত হয়।

অর্থনৈতিক গতিশীলতা অর্জিত হলেও সদ্য বিদায় নেয়া প্রধানমন্ত্রী তার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে নিকৃষ্টতম ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের’ মাধ্যমে তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী, কতিপয় অলিগার্ক-ব্যবসায়ী এবং পুঁজি-লুটেরাদের সাথে নিয়ে যে লাখ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তার ভয়াবহ কাহিনি তার পতনের পর উদ্ঘাটিত হতে শুরু করেছে। ৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি পত্রিকার খবরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কীভাবে এই সাড়ে ১৫ বছরে দেশের জনগণকে ১৫ লাখ আটান্নো হাজার দুইশ ছয় কোটি টাকা ঋণের সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা। পত্রিকাটির দাবি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারিখে বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে আঠারো লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অথচ, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার দিনে বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল মাত্র দুই লাখ ছিয়াত্তর হাজার আটশ ত্রিশ কোটি টাকা। এর মানে, এই দুই ঋণের স্থিতির অঙ্কের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে উপরে উল্লিখিত ১৫ লাখ আটান্নো হাজার দুই’শ ছয় কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার অজুহাতে একের পর এক মেগা-প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পাশাপাশি সারা দেশে বেলাগামভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে শত শত উন্নয়ন প্রকল্প। প্রতিটি মেগা-প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তিন-চার গুণ বেশি ব্যয় দেখানোর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে লাখ লাখ কোটি টাকা, যে জন্য এসব প্রকল্পের ব্যয় ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দেশের এমন একটি প্রকল্পের নাম করা যাবে না যেটার খরচ প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি ছাড়া কম নয়। এভাবে লুটপাটের অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বের নিকৃষ্টতম ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ গড়ে তুলেছিলেন, যার প্রতিফলন ঘটেছে ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে। ওই রিপোর্টে ২০১২-২০১৭ পর্যায়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লজ্জাজনক খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে মেগা-প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে কিংবা বাস্তবায়ন করছে তার তালিকা… পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা বন্দর, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাঁশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা বিআরটি প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেইনের মহাসড়ক, মিরসরাই-ফেনীতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা-পায়রা-যশোর রেলপথ, যমুনা রেলসেতু, পতেঙ্গা নিউমুরিং টার্মিনাল, আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন রেলপথ এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। অস্বীকার করা যাবে না যে এই মেগা-প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ কিছুটা গতি-সঞ্চার করেছে।

এগুলো ছাড়াও সারা দেশের গ্রাম ও শহরগুলোতে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এতদসত্ত্বেও আওয়ামী লীগ জনগণের বৃহদংশের মন জয় করতে পারেননি। কারণ, এই প্রকল্পগুলোকে জনগণ পুঁজি-লুণ্ঠনের মেগা-মওকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের কয়েক শত পুঁজি-লুটেরা পুঁজিপতির ধন-সম্পদের যে অভাবনীয় স্ফীতি জনগণ পর্যবেক্ষণ করেছে তার পেছনে মেগা-প্রকল্পের পুঁজি-লুণ্ঠন বড় ভূমিকা পালন করেছে।

কয়েকটি নিকৃষ্ট প্রকল্পের উদাহরণ দেখুন : পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া-যশোর-পায়রা রেলপথ, চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ এবং ঢাকা-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্প নিঃসন্দেহে নিকৃষ্ট প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলোতে প্রকৃত ব্যয়ের তিন-চারগুণ বেশি অর্থ ব্যয়িত হয়েছে। বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম ‘সাপ্লায়ার’স ক্রেডিট প্রকল্প’ ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণে নির্মীয়মাণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি আক্ষরিকভাবেই ‘সাদা হাতি প্রকল্প’। দুই ইউনিটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় হবে ১৩৫০ কোটি ডলার। এর দুটো ইউনিট থেকে নাকি ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ১৩৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ১২০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে রাশিয়া। রাশিয়ার ঋণের সুদের হার হবে ৪ শতাংশ, যা ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৮ বছরে বাংলাদেশকে সুদাসলে পরিশোধ করতে হবে।

অনেকেরই জানা নেই, মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণে ভারতের তামিলনাড়ুর কুদান কুলামে ২০০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপিত হয়েছে কয়েক বছর আগে। অথচ, আমাদের ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণ নিতে হচ্ছে কেন? সম্প্রতি একটি মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প’ দাবি করেছে যে শেখ হাসিনা তার পুত্র জয় এবং শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপের মধ্যস্থতায় এবং একটি মালয়েশিয়ান ব্যাংকের সহায়তায় রূপপুর প্রকল্প থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। (অবশ্য, রাশিয়ান ঠিকাদারি সংস্থা রোসাটম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে)। অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান রহমান রিমান্ডে স্বীকার করেছেন, এস আলম বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে এক লাখ কোটি টাকার বেশি লুট করেছে তার অর্ধেকটাই দিতে হয়েছে জয় ও টিউলিপকে!

খবরে প্রকাশ যে ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সততা, জনপ্রিয়তা, জনমত ও জবাবদিহিতার যে কোনো মূল্য ছিল না তারই প্রমাণ খামখেয়ালিভাবে গৃহীত নানা প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের হিড়িক, যার মাধ্যমে তিন বছরের মধ্যেই বিদেশি ঋণকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উল্লম্ফন করানো হয়েছে। আমি আমার লেখায় সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলাম, ‘অর্থনীতি বিপদে পড়বে যখন ২০২৫ সাল থেকে এই খামখেয়ালিপনার খেসারত হিসেবে ঋণগুলোর সুদাসলে কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়ে যাবে। দেশের একটি ইংরেজি দৈনিক জানিয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদাসলে কিস্তি পরিশোধ ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২.৭৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ-বছরের বাজেটে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।

বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের এহেন উচ্চ-প্রবৃদ্ধি ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। আরও দুঃখজনক হলো, এসব ঋণের অর্থে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যখন সম্পন্ন হবে তখন প্রকল্পগুলোর আয় থেকে ঋণের কিস্তির অতি সামান্য অংশ পরিশোধ করা সম্ভব হবে। বাকি অর্থ জনগণের ওপর দীর্ঘমেয়াদি বোঝা হিসেবে চেপে বসবে’। আমি আরোওলিখেছিলাম,‘আমাদের বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এখন ‘সাপ্লায়ার’স’ ক্রেডিট’। সাপ্লায়ার’স ক্রেডিটের অসুবিধে হলো যোগানদাতারা প্রকল্পের প্ল্যান্ট, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ঋণ হিসেবে দেওয়ার সময় প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজার দামের চাইতে অনেক বেশি দাম ধরে ঋণের পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয়। উপরন্তু, সাপ্লায়ারস ক্রেডিটের সুদের হারও সফট লোনের সুদের হারের চাইতে বেশি, ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও কম থাকে। আরো গুরুতর হলো, সাপ্লায়ারস ক্রেডিটে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ব্যবসায়ী ও আমলাদের ‘মার্জিনের হার’ অনেক বেশি হয়ে থাকে। সেজন্য সাপ্লায়ারস ক্রেডিটকে লুটপাটের অর্থনীতির সবচেয়ে বহুল-ব্যবহৃত মেকানিজম অভিহিত করা হয়।

দুঃখজনকভাবে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে সাপ্লায়ারস ক্রেডিট শাসকমহলের দুর্নীতি ও পুঁজিলুণ্ঠনের সবচেয়ে মারাত্মক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশের মেগা-প্রজেক্টগুলোর ব্যয় বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক হয়ে যাচ্ছে, কারণ এসব প্রকল্প থেকে পুঁজি-লুণ্ঠন এখন শাসক দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের লোভনীয় ধান্দা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে হলে যেহেতু তাদের অনেক কঠিন শর্তগুলো পরিপালনে শাসকরা জটিলতার সম্মুখীন হন তাই বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে সরকার প্রধানত সাপ্লায়ারস ক্রেডিটের প্রতি অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষত, গত পাঁচ বছর বেলাগামভাবে অনেকগুলো বাজে প্রকল্পে ঋণ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিকটু আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে’।

স্বল্প-প্রয়োজনীয় প্রকল্পে যথাযথ ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়া খামখেয়ালিভাবে বিনিয়োগের হিড়িকের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে এরকম প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশও শ্রীলংকার মতো ‘মেল্টডাউনে’ পড়তে পারে বলায় ২০২২ সালে শেখ হাসিনা ব্যঙ্গ করে আমাকে ‘অর্বাচীন অর্থনীতিবিদ’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের মে মাসে জার্মান টিভি ডয়চে ভেলে আমাকে এ-ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলায় আমি বলেছিলাম, ‘তিনি আমাকে অর্বাচীন অর্থনীতিবিদ বলছেন! তা তিনি বলতেই পারেন, কিন্তু আমি আমার অবস্থান বদলাব না’। আরো দুঃখজনক হলো, লুটেরা পুঁজিপতিদের লুণ্ঠনকৃত এই বিপুল অর্থ বেশিরভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি হিসাব দিয়েছে যে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার-উৎখাতের আগে-পরে দেশ থেকে লুটেরা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ভেগে যেতে শুরু করেছে। গণঅভ্যুত্থানে ইতোমধ্যেই তাদের এ-দেশীয় ঘরবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা লুটতরাজ, ভাঙচুর ও অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু, তারা ভেগে যেতে পারলে পাচারকৃত অর্থসম্পদের সহায়তায় বিদেশে তারা আরাম-আয়েশেই জীবন কাটাতে থাকবে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমিত হলে আবার দেশে ফিরে এসে রাজনীতিতে জাঁকিয়ে বসার সুযোগও রয়েছে অনেকের। কিন্তু, শেখ হাসিনা যে আঠারো লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ঋণের সাগরে দেশের জনগণকে ডুবিয়ে দিয়ে পালালেন এই বিপুল ঋণ শোধ করতে গিয়ে অর্থনীতি যে গভীর গিরিখাতে পড়ে যাবে সে মহাবিপদ থেকে আগামী কত বছরে দেশ উদ্ধার পাবে তা বলা মুশকিল!

ড. মইনুল ইসলাম : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয়

ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে নতুন দল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদ। আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দলটি। মো. নাজিমুল হককে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির এই নতুন দল জাতীয় সরকারের রূপরেখা ও নতুন মন্ত্রিসভার আনুপাতিক হারের […]

নিউজ ডেস্ক

০৬ মে ২০২৫, ১৪:৪২

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে নতুন দল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদ। আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দলটি।

মো. নাজিমুল হককে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির এই নতুন দল জাতীয় সরকারের রূপরেখা ও নতুন মন্ত্রিসভার আনুপাতিক হারের একটি প্রস্তাবও তুলে ধরে। ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি, বদিউল আলম মজুমদারকে উপরাষ্ট্রপতি, তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী ও ডা. শফিকুর রহমানকে উপপ্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব করেন সভায় উপস্থিত ঐক্য ও সংহতি পরিষদের নেতারা।

এ ছাড়া নতুন মন্ত্রিসভার আনুপাতিক হারও প্রকাশ করেন তারা। তাদের প্রস্তাব অনুসারে, বিএনপি ২৫ শতাংশ, জামায়াত ২০ শতাংশ, এনসিপি ১৫ শতাংশ, ইসলামি আন্দোলন ৫ শতাংশ, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে ২৫ শতাংশ সদস্য নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন নতুন এ দলটি।

জাতীয়

গেজেটের মেয়াদ শেষ, শপথ নিতে না পাওয়ায় মেয়র পদ হারালেন ইশরাক

সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক কারণে আমাকে শপথ নিতে দেয়নি। এটা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা উচ্চ আদালতে যাব এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”

গেজেটের মেয়াদ শেষ, শপথ নিতে না পাওয়ায় মেয়র পদ হারালেন ইশরাক

ইশরাক

নিউজ ডেস্ক

২৬ মে ২০২৫, ২২:৩৩

বিএনপি সমর্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে জয়ী হলেও মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারলেন না। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তা বাতিল বলে গণ্য হয়—এই আইনি সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (২৬ মে) বিকেল ৪টায়।

শেষ দিনের শপথ নিশ্চিত করতে ইশরাকের আইনজীবী ও রিটকারী পক্ষ মরিয়া চেষ্টা চালান। উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী শপথগ্রহণের পথ খুঁজতে তারা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষায় ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো মতামত আসেনি। এতে শপথের প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি।

এ নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, “সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক কারণে আমাকে শপথ নিতে দেয়নি। এটা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা উচ্চ আদালতে যাব এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”

ইশরাকের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তারা লিগাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। রিটকারী পক্ষও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার কথা বলেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন এই ইস্যু ঘিরে তুমুল আলোচনা চলছে। বিএনপি এবং ইশরাকের সমর্থকরা বলছেন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ‘অদৃশ্য এক খেলার’ মাধ্যমে তাকে শপথ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

শেষ মুহূর্তে কিছু নমনীয়তা দেখা গেলেও, আইন মন্ত্রণালয়ের নিরব অবস্থান পুরো প্রক্রিয়াকে স্থবির করে দেয়। ফলে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই শপথ যুদ্ধের শেষ বিজয়ী আসলে কে?

জাতীয়

বাংলাদেশ সীমান্তে আরএসও’র প্রকাশ্য সশস্ত্র মহড়া

বাংলাদেশের ভেতরে, নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের ক্রোক্ষ্যং চাক পাড়ায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া চালিয়েছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)।সামরিক কায়দায় কাঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র সদস্যদের এই মিছিল দেশবাসীর মনে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং সীমান্তে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি চলমান কর্মকাণ্ডের অংশ। স্থানীয় সূত্র জানায়, সীমান্তের ভেতর প্রবেশ […]

বাংলাদেশ সীমান্তে আরএসও’র প্রকাশ্য সশস্ত্র মহড়া

ছবি : সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক

০১ মে ২০২৫, ১৮:২৬

বাংলাদেশের ভেতরে, নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের ক্রোক্ষ্যং চাক পাড়ায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া চালিয়েছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)।
সামরিক কায়দায় কাঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র সদস্যদের এই মিছিল দেশবাসীর মনে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং সীমান্তে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি চলমান কর্মকাণ্ডের অংশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সীমান্তের ভেতর প্রবেশ করে আরএসও গোষ্ঠীর সদস্যরা শুধু মহড়াই চালাচ্ছে না, বরং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, আটক ও নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিনিয়ত তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে দুর্বল, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করছে।

সম্প্রতি একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আরএসও এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)-এর হাতে সীমান্তে অন্তত ১২টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি নিয়ন্ত্রণ করছে আরএসও এবং ৪টি এআরএ। প্রতিটি চেকপোস্টে ৩-৫ জন করে সশস্ত্র সদস্য নিয়োজিত রয়েছে, যারা নিয়মিত চাঁদা আদায়ে জড়িত।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস জানায়, এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী বাংলাদেশের ভেতরে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, পাচার এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।

সংস্থাটি একে যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে আখ্যায়িত করেছে এবং বাংলাদেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সীমান্তে আরএসও’র এই তৎপরতার পাশাপাশি পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউপিডিএফ’র মধ্যে গোপন বৈঠকের তথ্যও পাওয়া গেছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য কেএনএফকে প্রাথমিকভাবে অর্থ সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিষিদ্ধ ঘোষণা ও রাখাইনের জন্য কথিত ‘মানবিক করিডোর’ চালুর আলোচনা সীমান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল একটি ‘রিফিউজি ইস্যু’ নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত সীমান্ত রাজনীতি যা বাংলাদেশকে এক অদৃশ্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।