বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

পরীক্ষামূলক সংস্করণ

জাতীয়

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কারা বসিয়েছে প্রাণঘাতী ল্যান্ডমাইন

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়িতে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) পৃথক দুইটি ল্যান্ডমাইন বা স্থল মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন জন বাংলাদেশি আহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সামরিক জান্তা বাহিনীর টানা যুদ্ধের পর সীমান্তবর্তী ওই এলাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে এসেছে বলে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরেও বলা হয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার স্থল মাইন […]

নিউজ ডেস্ক

২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৩৬

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়িতে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) পৃথক দুইটি ল্যান্ডমাইন বা স্থল মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন জন বাংলাদেশি আহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সামরিক জান্তা বাহিনীর টানা যুদ্ধের পর সীমান্তবর্তী ওই এলাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে এসেছে বলে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরেও বলা হয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার স্থল মাইন বিস্ফোরণে তিনজন আহত হওয়ার পর নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেছেন, ওই তিনজন বাংলাদেশি অবচেতনভাবে কিংবা সচেতনভাবেই খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করার চেষ্টা করেছেন বলেই হয়তো এমন ঘটনা ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার একজন সাবেক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকা মিয়ানমারের অংশ সম্প্রতি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য যেমন মিয়ানমারে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সে দেশ থেকে গরুসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে আসছে।

সাবেক ওই জনপ্রতিনিধি এটিও জানিয়েছেন যে, পণ্য আনা নেওয়ায় ওই সীমান্তের কিছু নির্দিষ্ট রুট দিয়ে অবৈধ পথে প্রবেশ করতে গেলে মিয়ানমারের বিদ্রোহী বাহিনীকে ঘুস দিতে হয়।

অমি যতটুকু জানি অনেকেই ঘুস না দিয়ে চোরাকারবারি করতে গিয়ে বিকল্প পথ ব্যবহার করেন। শুক্রবার যারা গিয়েছিলেন তারা ওই বিকল্প পথে গিয়েই মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে স্থল মাইনের উদ্দেশ্য শত্রুকে হত্যা করা না, শত্রুকে বাধাগ্রস্ত করা। এগুলো কেউ যদি স্থাপন করেও তাহলে একটি নির্দিষ্ট আইন মেনে করতে হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে মিয়ানমানমারে এখন যা আছে সেটা স্পষ্ট আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘন।

শুক্রবার ভোরে উপজেলার আশারতলীর ফুলতলী সীমান্তের ৪৭-৪৮ নম্বর ও সাড়ে ১০টার সময় দোছ‌ড়ির ভালুখাইয়ার সীমান্তের ৪৯ নম্বর পিলার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী মঈন খালেদ জানান, প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে সকাল ৭ টায় সীমান্তের ৪৬ ও ৪৭ পিলার নিকটবর্তী জামছড়ি পয়েন্টে। অপর ঘটনাটি ঘটেছে ৪৯ নম্বর সীমান্ত পিলার নিকটবর্তী বালুর পয়েন্ট এলাকায়।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জানান, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পাচার করে গরু আনা হচ্ছে বাংলাদেশে। কেউ কেউ আবার সুপারিও আনতে যাচ্ছে। শুক্রবার যারা সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন তারাও হয়তো এই উদ্দেশ্য নিয়েই সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিলেন।

পরে সেখানে মাটির নিচে থাকা স্থল মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন তিনি। এর মধ্যে একজনের পা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অনেকে গাছ কাটতে যায়, অনেকে অন্য নানা কারণে যায়। কিন্তু শুক্রবার ওনারা কি উদ্দেশ্যে গেছে সেটি আমার জানা নেই।

সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির এত কড়া নিরাপত্তার পরও কিভাবে তারা সীমান্তের মিয়ানমার অংশে গেল এবং দুর্ঘটনায় আহত হলো সেটি নিয়ে প্রশ্ন ছিল তার কাছে।

জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এত লম্বা সীমান্ত। বিজিবির লজিস্টিকের সমস্যা আছে। বিজিবি তো প্রত্যেক পয়েন্টে দাড়িয়ে থাকতে পারে না। যেসব পয়েন্টে বিজিবির নজরদারির ঘাটতি থাকে সে সব পয়েন্টে নাগরিকরা ক্রস করে। এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে স্থল মাইন বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

বিশেষ করে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সময়ে স্থল মাইন বিস্ফোরণের খবর বেশি আসতে শুরু করে সীমান্ত থেকে।

রাখাইন রাজ্য থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার সময় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে স্থাপন করা অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন বিস্ফোরণে গত কয়েক বছর হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যাযজ্ঞ চালাতে অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন ব্যবহৃত হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, সীমান্তে সাধারণত যে মাইন ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেটা অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এখনও বাংলাদেশ সীমান্তে স্থল মাইন পুঁতে রাখছে যা সেখান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্থাটি বলেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সীমান্তের মূল পয়েন্টগুলোতে ল্যান্ডমাইন পুঁতেছে।

এমনকি উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে হামলার আগে সেখানকার রাস্তায়ও ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষিদ্ধ অ্যান্টি-পার্সোনাল মাইন যুদ্ধক্ষেত্রে শুধুমাত্র মানুষ নিধনের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন থেকে আলাদা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আহাম্মেদ বলেন, মাইনের উদ্দেশ্য কিন্তু শত্রুকে হত্যা করা না। শত্রুকে বাধাগ্রস্ত করা। সে যেন আমার সীমানায় আসতে না পারে। যদি কেউ আসতেও চায় সে যেন সেটি অপসারণ করে তারপর আসে। এই সময়টুকু অন্তত দেওয়া হয় যাতে শত্রু পক্ষকে প্রতিহত করার প্রস্তুতিটুকু নেওয়া যায়।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল নামার পর সীমান্তে স্থল মাইন স্থাপনের পর বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে মিয়ানমারের কাছে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর টানা লড়াই চলে।

সে সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা এসেও পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে।

মিয়ানমারের গণমাধ্যমের খবর বলা হয়, আগে রাখাইনসহ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো মিয়ানমার বাহিনীর দখলে থাকলেও টানা যুদ্ধের পর সেসবের নিয়ন্ত্রণ চলে এখন বিদ্রোহী আরাকান আর্মির হাতে।

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ মনে করছেন, সীমান্তের ওপারের এলাকাগুলোর দখল নিলেও আরাকান আর্মির মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে যে দেশটির সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী এটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

আরাকান আর্মির দখল থেকে ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিতে যৌথ অভিযান হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর। এজন্য মিয়ানমার জান্তা বাহিনী আবারও অভিযান চালাতে পারে। মূলত এমন অভিযান যেন না চালাতে পারে বা সেটিকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য এটা করতে মাইন পুতে রেখে প্রতিহত একটা কৌশল হতে পারে আরাকান আর্মির।

তবে সীমান্ত এলাকা বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ার আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও সীমান্তে স্থল মাইন স্থাপনের অভিযোগ উঠেছিল। রোহিঙ্গারা যাতে ফিরে যেতে না পারে, সেজন্য এসব স্থল মাইন স্থাপন করা হয়েছিল বলে তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল।

সীমান্তবর্তী বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ির একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ৭-৮ বছর আগে কিছু মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো ঘটনার কথা তিনি শোনেন নি।

তাহলে হঠাৎ কেন এই স্থল মাইনে বিস্ফোরণে আহতের ঘটনা ঘটলো। নতুন করে মিয়ানমারের ভেতরে কেন মাইন স্থাপন করা হলো সেটি নিয়ে প্রশ্ন তারও।

শুক্রবার সকালেই পরপর দুটি মাইন বিস্ফোরণ ও এতে হতাহতের ঘটনাকে একেবারেই স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বাংলাদেশের বাসিন্দা ও সীমান্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কেউ যদি মাইন স্থাপন করতে চায় তাহলে একদম নিয়ম মেনেই তা করা উচিত।

বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, প্রত্যেকটা মাইন ফিল্ডকে সুনির্দিষ্টভাবে তারকাটার বেড়া দিতে হবে। সেখানে একটা সাইন পোস্ট দিতে হবে। হলুদের ওপর কালো দিয়ে লিখতে হয়। যা দেখে দুর থেকে দেখে মানুষ বুঝতে পারে।

কিন্ত বিদ্রোহী আরাকান আর্মি যদি এই মাইন স্থাপন করেই সেটা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে করছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে আহমেদ বলেন, নুইসেন্স মাইন্ড বা অঘটন ঘটাতেই এটি স্থাপন করা হয়েছে। হয়তো আরাকান আর্মির এমন কোনো পরিকল্পনা করে রেখেছে যেখানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পাল্টা অভিযানে যাবে তাদেরকে প্রতিহত করতেই এলোমেলোভাবে মাইন স্থাপন বা ফেলে রাখা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে এটা হয়তো তারা করছে।

তবে গোপনে মাইন স্থাপনের বিষয়টি একেবারেই আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

স্থল মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তি, যেটা অটোয়া কনভেনশন নামে পরিচিত, সেই চুক্তি অনুযায়ী স্থল মাইন ব্যবহার, মজুত, উৎপাদন, ও হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে এই চুক্তিতে সই করেনি মিয়ানমার, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইসরায়েলসহ আরও কয়েকটি দেশ।

বাংলাদেশসহ ১৬৪টি দেশ এখনো পর্যন্ত এই চুক্তিতে সই করেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন বাংলাদেশকে এখন এই বিষয়টি কূটনৈতিক চ্যানেলে সামাল দিতে হবে।

নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের এখন উচিত অবশ্যই অবশ্যই গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো। সীমান্ত এলাকার কোথায় কোথায় মাইন থাকতে পারে সেটি গ্রাম বাসিকে জানাতে পারে তারা।

এক্ষেত্রে স্থানীয় এনজিওগুলোর মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শাও তার।

মাইন স্থাপনের বাইরেও গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে।

সে দেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ হলেও বাংলাদেশের বাসিন্দারা আহত হচ্ছেন, এমন কি সীমান্তবর্তী নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশের চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

এ অবস্থায় এই সংকট কাটাতে বাংলাদেশকে শক্ত হয়ে প্রতিবাদ জানানো এবং কৌশল গ্রহণের পরামর্শও দিচ্ছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আহাম্মদ আরও বলেন, হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ বা বড় পরিসরে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এই সংকট থেকে উত্তরণ বেশ কঠিন।

পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় তীক্ষ্ম নজরদারি বাড়ানোরও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

জাতীয়

ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে নতুন দল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদ। আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দলটি। মো. নাজিমুল হককে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির এই নতুন দল জাতীয় সরকারের রূপরেখা ও নতুন মন্ত্রিসভার আনুপাতিক হারের […]

নিউজ ডেস্ক

০৬ মে ২০২৫, ১৪:৪২

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে নতুন দল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদ। আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দলটি।

মো. নাজিমুল হককে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির এই নতুন দল জাতীয় সরকারের রূপরেখা ও নতুন মন্ত্রিসভার আনুপাতিক হারের একটি প্রস্তাবও তুলে ধরে। ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি, বদিউল আলম মজুমদারকে উপরাষ্ট্রপতি, তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী ও ডা. শফিকুর রহমানকে উপপ্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব করেন সভায় উপস্থিত ঐক্য ও সংহতি পরিষদের নেতারা।

এ ছাড়া নতুন মন্ত্রিসভার আনুপাতিক হারও প্রকাশ করেন তারা। তাদের প্রস্তাব অনুসারে, বিএনপি ২৫ শতাংশ, জামায়াত ২০ শতাংশ, এনসিপি ১৫ শতাংশ, ইসলামি আন্দোলন ৫ শতাংশ, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে ২৫ শতাংশ সদস্য নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন নতুন এ দলটি।

জাতীয়

গেজেটের মেয়াদ শেষ, শপথ নিতে না পাওয়ায় মেয়র পদ হারালেন ইশরাক

সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক কারণে আমাকে শপথ নিতে দেয়নি। এটা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা উচ্চ আদালতে যাব এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”

গেজেটের মেয়াদ শেষ, শপথ নিতে না পাওয়ায় মেয়র পদ হারালেন ইশরাক

ইশরাক

নিউজ ডেস্ক

২৬ মে ২০২৫, ২২:৩৩

বিএনপি সমর্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে জয়ী হলেও মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারলেন না। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তা বাতিল বলে গণ্য হয়—এই আইনি সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (২৬ মে) বিকেল ৪টায়।

শেষ দিনের শপথ নিশ্চিত করতে ইশরাকের আইনজীবী ও রিটকারী পক্ষ মরিয়া চেষ্টা চালান। উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী শপথগ্রহণের পথ খুঁজতে তারা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষায় ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো মতামত আসেনি। এতে শপথের প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি।

এ নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, “সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক কারণে আমাকে শপথ নিতে দেয়নি। এটা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা উচ্চ আদালতে যাব এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”

ইশরাকের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তারা লিগাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। রিটকারী পক্ষও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার কথা বলেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন এই ইস্যু ঘিরে তুমুল আলোচনা চলছে। বিএনপি এবং ইশরাকের সমর্থকরা বলছেন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ‘অদৃশ্য এক খেলার’ মাধ্যমে তাকে শপথ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

শেষ মুহূর্তে কিছু নমনীয়তা দেখা গেলেও, আইন মন্ত্রণালয়ের নিরব অবস্থান পুরো প্রক্রিয়াকে স্থবির করে দেয়। ফলে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই শপথ যুদ্ধের শেষ বিজয়ী আসলে কে?

জাতীয়

বাংলাদেশ সীমান্তে আরএসও’র প্রকাশ্য সশস্ত্র মহড়া

বাংলাদেশের ভেতরে, নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের ক্রোক্ষ্যং চাক পাড়ায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া চালিয়েছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)।সামরিক কায়দায় কাঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র সদস্যদের এই মিছিল দেশবাসীর মনে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং সীমান্তে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি চলমান কর্মকাণ্ডের অংশ। স্থানীয় সূত্র জানায়, সীমান্তের ভেতর প্রবেশ […]

বাংলাদেশ সীমান্তে আরএসও’র প্রকাশ্য সশস্ত্র মহড়া

ছবি : সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক

০১ মে ২০২৫, ১৮:২৬

বাংলাদেশের ভেতরে, নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের ক্রোক্ষ্যং চাক পাড়ায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া চালিয়েছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)।
সামরিক কায়দায় কাঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র সদস্যদের এই মিছিল দেশবাসীর মনে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং সীমান্তে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি চলমান কর্মকাণ্ডের অংশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সীমান্তের ভেতর প্রবেশ করে আরএসও গোষ্ঠীর সদস্যরা শুধু মহড়াই চালাচ্ছে না, বরং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, আটক ও নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিনিয়ত তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে দুর্বল, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করছে।

সম্প্রতি একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আরএসও এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)-এর হাতে সীমান্তে অন্তত ১২টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি নিয়ন্ত্রণ করছে আরএসও এবং ৪টি এআরএ। প্রতিটি চেকপোস্টে ৩-৫ জন করে সশস্ত্র সদস্য নিয়োজিত রয়েছে, যারা নিয়মিত চাঁদা আদায়ে জড়িত।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস জানায়, এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী বাংলাদেশের ভেতরে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, পাচার এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।

সংস্থাটি একে যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে আখ্যায়িত করেছে এবং বাংলাদেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সীমান্তে আরএসও’র এই তৎপরতার পাশাপাশি পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউপিডিএফ’র মধ্যে গোপন বৈঠকের তথ্যও পাওয়া গেছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য কেএনএফকে প্রাথমিকভাবে অর্থ সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিষিদ্ধ ঘোষণা ও রাখাইনের জন্য কথিত ‘মানবিক করিডোর’ চালুর আলোচনা সীমান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল একটি ‘রিফিউজি ইস্যু’ নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত সীমান্ত রাজনীতি যা বাংলাদেশকে এক অদৃশ্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।