কারো বাড়িতে পুলিশ হাজির হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এই অবিশ্বাস ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যে প্রকৃত পুলিশ এসেছে কি না। পুলিশের পরিচয় না দিয়েই আসামি ধরা এবং তল্লাশি চালানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই সমস্যার সমাধানে সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। কমিশন বলেছে, কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার ও তল্লাশির সময় পুলিশকে পরিচয় দিতে হবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পুলিশের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পুলিশ সংস্কার কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের পরিচয় না দিয়েই অভিযানের অভিযোগ উঠছিল। অনেক সময় পুলিশের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যা জনসাধারণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করে।
সাম্প্রতিক পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামি গ্রেপ্তার ও তল্লাশির সময় পুলিশকে অবশ্যই পরিচয় প্রদান করতে হবে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য পরিচয় দিতে না চান বা তল্লাশির জন্য যথাযথ ওয়ারেন্ট না থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পুলিশের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জরুরি কল সার্ভিস ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, অভিযানের সময় পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ বিশেষ ভেস্ট-পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, রাতের বেলা কোনো গৃহে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বা গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, কোনো মামলায় আদালতের আদেশ ছাড়া এফআইআরবহির্ভূত কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ওভার টাইম’ মজুরি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল জানান, পুলিশের কাজের চাপ অনেক বেশি, তাই ওভার টাইম মজুরি পেলে তারা আরও মনোযোগী হবে এবং দুর্নীতির প্রবণতা কমে আসবে।
কমিশন মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিষয়টিকে অপচর্চা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের মামলা দিয়ে হয়রানি ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়া হয়। সুপারিশে বলা হয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যদি কোনো পুলিশ সদস্য কাউকে হয়রানি করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানবাধিকার রক্ষায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা সরাসরি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রধান কার্যালয়ে মানবাধিকার সেল কার্যকর করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে, যাতে অভিযোগ প্রাপ্তির পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।