বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত গণতন্ত্রের প্রতি যে অঙ্গীকার তা রক্ষা করছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট অত্যাচারি-নিপীড়নকারী-হত্যাকারী শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন।
দুর্ভাগ্য, আজকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখান থেকে তিনি আবার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার যে বিপ্লব সেটাকে নস্যাৎ করার বিভিন্ন চক্রান্ত শুরু করেছে। এই ব্যক্তিকে (শেখ হাসিনা) এভাবে আশ্রয় দিয়ে ভারত তার যে, কমিটমেন্ট টু ডেমোক্রেসি এটা তারা রক্ষা করেছে না। ভারতের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা তাকে আইনানুগভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কাছে তুলে দেন এবং দেশের মানুষ তার বিচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই বিচারের সম্মুখিন তাকে হতে দেন।
গতকাল মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির দুই নতুন সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনকে নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে যান এবং তার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিশেষ মোনাজাত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার যে অপরাধ সেই অপরাধকে খাটো করে দেখে না। তারা মনে করে যে, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার এই ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দূর্বল করে দিয়েছে, জাতিকে আহত করেছে। তার শাসনামলে এই জাতিকে সে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণে আবদ্ধ করে গেছে। পাচার হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। সমস্ত ইন্সটিটিউশন ভেঙে দিয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের পর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এসেছে। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া। তবে আমি মনে করি, যে জঞ্জাল আওয়ামী লীগ সরকার সৃষ্টি করে গেছে, সেটাকে দূর করতে অবশ্যই কিছু সময় দরকার। একটি সঠিক সুন্দর নির্বাচন করার জন্য হলেও একটা সময়ের দরকার। সেই সময় অবশ্যই এদেশের মানুষ তাদেরকে দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১১ দিনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।
দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য করায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। আগামী দিনগুলোতে বিএনপি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মেজর হাফিজ বলেন, গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন ১৬ বছর আগে বিএনপি শুরু করেছিলো। শেষ পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে গিয়েছে। তিনি আন্দোলনের শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যতজন শহীদ হয়েছে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বলেন, আবু সাঈদ জীবন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
মানবাধিকার এতোদিন লঙ্ঘিত ছিলো, গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র কেউ যেন ব্যাহত করতে না পারে, সাধারণ মানুষের মানবাধিকারকে কেউ যেন লঙ্ঘন করতে না পারে সেজন্য বিএনপি এবং ছাত্র-জনতা আমরা এক সাথে কাজ করবো।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বিএনপি যেটা শুরু করেছিলো ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে অর্থাৎ এদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে যেসমস্ত গুম হয়েছে, যারা হারিয়ে গেছে, তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব। যারা শহীদ হয়েছে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। দেশ আজকে একটি নবতর স্বাধীনতা পেয়েছে। একবার আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পেয়েছি। আর এবার সত্যিকার অর্থে ৫ আগস্ট নতুন প্রজন্ম দেখতে পেলো, স্বাদ পেলো স্বাধীনতা কাকে বলে, কথা বলার স্বাধীনতা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা কাকে বলে। এতোদিন মানবাধিকার ছিলো না। এক ব্যক্তির শাসন ছিলো সেখান থেকে আজ আমরা মুক্ত হয়েছি। গণতন্ত্রের যাত্রা পথের মুক্তিকে আমাদেরকে সম্মুন্নত রাখতে হবে।
এ সময়ে বিএপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়নসহ সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।