সুস্থ মনই সুস্থ দেহের মূল ভিত্তি, আর মনকে সুস্থ ও প্রফুল্ল রাখার অন্যতম উপায় হলো হাস্য-রসিকতা। জ্ঞানীরা বলেন, আনন্দ ও চিত্তবিনোদন মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে এবং এটি পার্থিব সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি।
আজকাল মনোবিজ্ঞানীরাও মানুষের সুস্থতার জন্য আনন্দ ও চিত্তবিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি ও আনন্দ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের মতো রোগের বিস্তার রোধ করতেও সহায়তা করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, হাসি শরীরে সজীবতা ও প্রশান্তি আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মানসিক চাপ, হতাশা ও দুঃখ দূর করে পরিবার ও সমাজকে সুসংগঠিত রাখার জন্য আনন্দ অপরিহার্য। একজন মানুষের হাসিখুশি চেহারা অন্যদেরকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে, ঠিক তেমনি দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনোভাবও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ইসলাম ধর্ম মানুষের শারীরিক ও মানসিক চাহিদার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং প্রশান্তি ও প্রফুল্লতাকে একটি সফল জীবনের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে।
আনন্দের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে নির্দোষ খেলাধুলা, কবিতা আবৃত্তি, উপহার বিনিময়, উজ্জ্বল পোশাক পরিধান, সুগন্ধি ব্যবহার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, এবং শরীরচর্চা। এসব কর্মকাণ্ড শুধু বিনোদন নয়, বরং মানসিক শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম উপায়।
হাস্যরসও আনন্দের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি হতাশা ও বিষণ্নতা দূর করে এবং মনকে সতেজ রাখে। তবে রসিকতার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যেন তা কারও মনে আঘাত না দেয় বা গুনাহের মধ্যে না পড়ে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, রসিকতা মানুষকে ঘনিষ্ঠ করে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত করে। মহানবী সা. নিজেও হাস্যরস পছন্দ করতেন।
একবার রসুলুল্লাহ সা. ও হজরত আলী রা. একসঙ্গে বসে খুরমা খেজুর খাচ্ছিলেন। রসুলুল্লাহ সা. খেজুরের বিচিগুলো আলী রা. -এর সামনে রাখলেন। খাওয়া শেষে তিনি মজার ছলে বললেন, ‘যার সামনে বিচি বেশি, সে অতিভোজী।’ আলী রা. জবাব দিলেন, ‘যে বিচিসহ খেজুর খেয়েছে, সে-ই বেশি খেয়েছে!’
এই ছোট্ট গল্পের মতোই, সুস্থ ও আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য আমাদের রসিকতা ও হাসি-খুশি পরিবেশ বজায় রাখা উচিত। আনন্দ কেবল ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি সমাজেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আসুন, আমরা সবাই সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকার জন্য হাস্যরস ও আনন্দকে জীবনের অংশ করে নেই।