আজ ১ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব হিজাব দিবস। বিশ্বব্যাপী হিজাবভীতির বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ এবং হিজাবের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরির লক্ষ্যে দিনটি পালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের নারীরা এই বিশেষ দিনটিকে উদযাপনে অংশ নেন।
১৩তম বিশ্ব হিজাব দিবসের প্রতিপাদ্য:এই বছর দিবসটির ১৩তম বার্ষিকী উদ্যাপিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে #HijabisUnsilenced (হিজাব নীরবতাহীন)। এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে হিজাব পরিধানকারী নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা ও সম্মানের গুরুত্বকে আরও বেশি প্রচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে হিজাব দিবস উদ্যাপন:বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে দিনটি নানা আয়োজনে উদ্যাপিত হচ্ছে। এই দিবসটি উদ্যাপনের অন্যতম লক্ষ্য হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহনশীলতা ও সংহতি বৃদ্ধির মাধ্যমে মুসলিম নারীদের ধর্মীয় অনুশীলন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এছাড়া পোশাক ও অভিব্যক্তি সম্পর্কিত ব্যক্তিগত পছন্দের বৈচিত্র্য রক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
বিশ্ব হিজাব দিবসের সূচনা:বিশ্ব হিজাব দিবস পালনের উদ্যোগ নেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা নাজমা খান। ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা করেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়ে ব্রঙ্কসে বসবাস শুরু করেন তিনি। সেখানে হিজাব পরিধান করার পর থেকে বিভিন্ন বৈষম্য ও অসহিষ্ণু আচরণের সম্মুখীন হন। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই তিনি বিশ্ব হিজাব দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। বর্তমানে দ্য ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে (ডাব্লিওএইচডি) সংস্থার উদ্যোগে দিবসটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
হিজাব: সম্মান ও স্বাধীনতার প্রতীক‘হিজাব’ শব্দটির আরবি অর্থ বিভাজন বা পর্দা। ইসলামি শরিয়ত অনুসারে মুসলিম নারীদের নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। মহান আল্লাহ মুসলিম নারীদের জন্য পর্দার বিধান নির্ধারণ করেছেন, যা তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (সর্বাঙ্গ আচ্ছাদনকারী পোশাক) একটা অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়। যেন তাদেরকে (স্বাধীন নারী হিসেবে) চেনা সহজতর হয়। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৯)
হিজাব: বাধা নাকি স্বাধীনতা?বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীদের হিজাব পরিধানে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও, এটি অনেক নারীর জন্য আশা ও অগ্রগতির প্রতীক। হিজাব পরিধান করার মাধ্যমে নারীরা তাদের পরিচয়, বিশ্বাস এবং আত্মপরিচয় প্রকাশের সুযোগ পান। এটি শুধু ধর্মীয় অনুশীলন নয়, বরং আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবেও কাজ করে।
আজকের এই বিশেষ দিনে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ হিজাব পরিধানকারী নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি প্রকাশ করছে। এই দিবসের মূল বার্তা হলো প্রত্যেক নারী তার নিজস্ব পোশাক নির্বাচন করার স্বাধীনতা রাখে, এবং তার এই অধিকারকে সম্মান জানানো উচিত।