হিজরি ক্যালেন্ডার হলো ইসলামের একটি মৌলিক সময় গণনার পদ্ধতি, যা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। নতুন চাঁদের উদয় হলে হিজরি মাসের সূচনা হয়, এবং ইসলামের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিধান এই ক্যালেন্ডারের অনুসারে পালন করা হয়। রমজান, ঈদ, হজ, আশুরা ও অন্যান্য ইবাদতের সময় নির্ধারণে হিজরি ক্যালেন্ডার অপরিহার্য।
কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,‘তারা তোমাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা মানুষের ও হজের জন্য সময় নির্ধারক। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৯) এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, নতুন চাঁদ শুধু একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়; বরং এটি সময় নির্ধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
নতুন চাঁদ দেখা সুন্নত
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে চাঁদ দেখতেন এবং সাহাবাদেরও চাঁদ দেখার জন্য উৎসাহিত করতেন। সাধারণ মুসলমানদের জন্য চাঁদ দেখা মুস্তাহাব (সুন্নত); তবে কিছু মানুষের জন্য এটি ফরজে কিফায়া। অর্থাৎ, যদি কোনো নির্দিষ্ট দল বা সমাজের কিছু ব্যক্তি চাঁদ দেখা ও হিসাব রাখা নিশ্চিত করে, তবে পুরো উম্মাহ দায়মুক্ত হবে। কিন্তু কেউই যদি এটি না করে, তাহলে সকলেই গুনাহগার হবে।
নতুন চাঁদ দেখার দোয়া
নতুন চাঁদ দেখার সময় নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষ কিছু দোয়া পাঠ করতেন। শাবান, রমজান, শাওয়ালসহ যে কোনো মাসের নতুন চাঁদ দেখার পর এই দোয়াগুলো পাঠ করা সুন্নত।
প্রথম দোয়া
عَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহূ আলায়না বিল আমনি ওয়াল ঈমানী ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি রাব্বী ওয়া রাব্বুকাল্লাহু।
দোয়াটির অর্থ: হে আল্লাহ! এই নতুন চাঁদ আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় করো। (হে চাঁদ!) আমার রব এবং তোমার রব এক আল্লাহ।
দ্বিতীয় দোয়া
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ وَالتَّوْفِيقِ لِمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى رَبُّنَا وَرَبُّكَ اللَّهُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার। আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমান; ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; ওয়াত তাওফীকি লিমা ইউহিব্বু রাব্বুনা ওয়া ইয়ার যা। রাব্বানা ওয়া রব্বুকাল্লাহ।
দোয়াটির অর্থ: আল্লাহ মহান! হে আল্লাহ! এই নতুন চাঁদ আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত কর। আমাদের সে কাজ করার তাওফিক দাও, যা তুমি ভালোবাসো এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। (হে চাঁদ!) আমাদের ও তোমার রব এক আল্লাহ।
হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রতি সচেতনতা
হিজরি ক্যালেন্ডার শুধু সময় গণনার একটি মাধ্যম নয়; বরং এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে চাঁদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন এবং মুসলমানদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
যারা চাঁদ দেখা ও হিজরি ক্যালেন্ডারের হিসাব সংরক্ষণ করবে, তারা উম্মাহকে একটি সুসংগঠিত ও সঠিক সময়ানুযায়ী ইবাদত পালনের সুযোগ করে দেবে। এটি শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্য নয়; বরং ইসলামের শুদ্ধ আমল ও সময়ানুবর্তিতার জন্য অপরিহার্য বিষয়।
হিজরি ক্যালেন্ডার ও নতুন চাঁদ দেখার প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। এটি আমাদের ইবাদত ও জীবনধারাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। ইনশাআল্লাহ ।
আল্লাহ আমাদের এই চাঁদকে কল্যাণ ও শান্তির বার্তা নিয়ে আসার তৌফিক দান করুন। আমিন।