১৪৪৬ হিজরির জুমাদাল আখিরাহ মাসের ৭ তারিখ (২৫ জানুয়ারি, ২০২৫) শুক্রবারের সূর্যাস্তের সময় ধারণ করা বিরল এক দৃশ্য বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মক্কার প্রসিদ্ধ পাহাড় ‘জাবালে নুর’ সবুজ হয়ে ওঠেছে।
এ পাহাড়েই ঐতিহাসিক হেরা গুহা অবস্থিত। যেখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে কোরআনের প্রথম ওহি নাজিল হয়েছিল, সেটি টানা বৃষ্টির ফলে সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে।
সাধারণত এ পবিত্র স্থানটি শুষ্ক ও পাথুরে প্রাকৃতিক অবস্থায়ই থাকে। তবে এবার দীর্ঘমেয়াদি বৃষ্টিপাত এ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি পরিবর্তন করে দিয়েছে, যা মহানবী (সা.)-এর একটি উল্লেখযোগ্য হাদিসের সঙ্গে মিল যাওয়ায় অনেকের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
মুসলিম শরিফের ১৫৭ নম্বর হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, প্রলয় বা কিয়ামত আসবে না যতক্ষণ না আরবের ভূমি আবার সবুজ ও উর্বর হয়ে যায়। জাবালে নুরের সবুজাভ এ পরিবর্তন ইসলামি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানের প্রতি আরও বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। টানা বৃষ্টির ফলে এ পরিবর্তন ঘটেছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দিনগুলোতেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
তবে কর্তৃপক্ষ পবিত্র মক্কায় বসবাসকারী ও হজযাত্রী ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। সবুজে আচ্ছাদিত জাবালে নুর দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে তিনটি হাদিস পাওয়া যায়। প্রথম হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘আরব ভূখণ্ডে তৃণভূমি ও নদী-নালা ফিরে না আসা পর্যন্ত কেয়ামত হবে না।’ দ্বিতীয় হাদিসেও একই শব্দগুলো এসেছে। তৃতীয় হাদিসে তাবুকের যুদ্ধের একটি ঘটনা প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) তাবুক সম্পর্কে মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে বলেছিলেন, ‘হে মুআজ, তোমার আয়ু যদি দীর্ঘ হয়, তবে শিগগিরই তুমি এই স্থান বসতি ও উদ্যানে ভরা দেখতে পাবে।’ (মুসলিম: ১৫৭)
হাদিসগুলোর ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেছেন, আরব উপদ্বীপের মরুভূমিগুলোতে কেয়ামতের আগে সবুজ তৃণলতা গজাবে এবং নদী-নালার সৃষ্টি হবে। হাদিসে যেহেতু ‘ফিরে আসবে’ এসেছে, তাই বোঝাই যাচ্ছে, প্রাচীন যুগের কোনো এক সময় আরবের মরু অঞ্চলে সবুজ তৃণভূমি ও নদী-নালা ছিল। কেয়ামতের আগে আবার আরবের সেই রূপ ফিরে আসবে। সাম্প্রতিক সময়ে আরবের বিভিন্ন স্থানে গবেষণা করে অনেক ভূতাত্ত্বিকই এটি নিশ্চিত হয়েছেন। (ইসলামওয়েব ডটকম)
কাবাঘরের আশপাশের এলাকায় সবুজের সমারোহ। আরবে দিনে দিনে শীত বাড়ছে। এমনকি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য দেশে সম্প্রতি তুষারপাত হতেও দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণও বাড়ছে। এসব বিষয় আরবের মরুভূমিতে প্রাণের সঞ্চার করছে। ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। চাষাবাদ আগের তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে। তবে পুরো আরব ভূখণ্ডে সবুজ তৃণলতা ও নদী-নালা এখনো সৃষ্টি হয়নি, যার কথা প্রথম ও দ্বিতীয় হাদিসে বলা হয়েছে।
তবে তৃতীয় হাদিসে তাবুকের যে স্থানের কথা বলা হয়েছে, তা আজ বাস্তব। তাবুকজুড়েই এখন বিভিন্ন ফল-ফলাদির বাগান, যা মহানবী (সা.)-এর সেই ভবিষ্যদ্বাণীর কথা কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (নিহায়াতুল আলম) ।