মহা-পবিত্র কুরআনুল কারিম একদিকে যেমন হেদায়েতের কিতাব, অন্যদিকে এতে রয়েছে দুনিয়ার যাবতীয় উপকারিতা। দুনিয়ার অশুভ পরিস্থিতি ও অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ দুটি সুরা রয়েছে, যেগুলোর নাম আমরা অনেকেই জানি। একটি হলো সুরা ফালাক এবং অপরটি হলো সুরা নাস। এই দুটি সুরার আমলে, প্রিয় নবীজী সা. কঠিন জাদুর প্রভাব থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
বিশ্বনবী সা. -কে জাদুর মাধ্যমে ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ইহুদিদের মিত্র বনু জুরায়েক গোত্রের লাবিদ বিন আছাম নামের এক মুনাফিক তার মেয়েদের মাধ্যমে এই জাদু করেছিল। প্রথমে সে নবীজির ব্যবহৃত কিছু জিনিস, যেমন চিরুনি ও কিছু চুল সংগ্রহ করে। এরপর, তার কন্যাদের দিয়ে ওই চুলে ১১টি জাদুর ফুঁক দিয়ে ১১টি গিরা বাঁধা হয় এবং সুঁচ ঢুকানো হয়। এরপর, চিরুনিটি একটি খেজুরের শুকনা কাঁদির মধ্যে রেখে জারওয়ান নামক কুয়ার তলায় চাপা দেওয়া হয়।
মা আয়েশা রা. বলেন, ওই জাদুর প্রভাবে আল্লাহর রসুল সা. মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন। তিনি এমন কাজ করছিলেন, যা তিনি করেননি বলে মনে করতেন। একরাতে, দুইজন ফেরেশতা এসে নিজেদের মধ্যে কথা বলে নবীজীকে জাদুর ব্যাপারে অবহিত করেন। এর পরের দিন, হজরত আলী রা., জুবায়ের রা. ও আম্মার বিন ইয়াসির রা. -সহ একদল সাহাবি ওই কুয়া থেকে পাথরের নীচে চাপা দেওয়া চিরুনিটি বের করেন। এ সময় সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল হয়। নবীজী সা. ওই দুই সুরার ১১টি আয়াতের প্রতিটি পাঠ শেষে একটি করে গিরা খুলতে থাকেন, এবং সব গিরা খুলে গেলে তিনি স্বস্তি লাভ করেন।
লোকেরা ওই ব্যক্তি লাবিদ বিন আছামকে হত্যা করতে চাইলে, নবীজী সা. নিষেধ করে বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করেছেন, এটা আমার জন্য যথেষ্ট। আমি চাই না, লোকদের মধ্যে মন্দ ছড়িয়ে পড়ুক।’ (বুখারি: ৬৩৯১; আহমদ: ২৪৬৯৪; বায়হাকি, দালায়েল: ২৫১০; ইবনু কাসির, সুরা নাস অবলম্বনে)
শয়তানের আক্রমণ, জাদু ও অন্যান্য অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সুরা ফালাক ও সুরা নাস যথেষ্ট। পাশাপাশি, সুরা ইখলাস পাঠ করা আরও কার্যকর। এই তিনটি সুরা (ফালাক, নাস, ইখলাস) যারা নিয়মিত পড়বে, তারা সব ধরনের অশুভ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত থাকবে। ইনশাআল্লাহ।
সুরা ফালাক
সুরা ফালাক পবিত্র কুরআনের ১১৩তম সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরায় বলা হয়েছে,বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে। অন্ধকার রাতের অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে, এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।’(সুরা ফালাক, আয়াত: ১-৫)
সুরা নাস
সুরা নাস পবিত্র কুরআনের ১১৪তম ও সর্বশেষ সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ৬। এই সুরায় বলা হয়েছে, ‘বলুন, আমি স্মরণ নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধীশ্বরের, মানুষের উপাসকের, তার কুমন্ত্রণার অমঙ্গল হতে, যে সুযোগমতো আসে ও সুযোগমতো সরে পড়ে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জ্বিন বা মানুষের মধ্য থেকে।’(সুরা নাস, আয়াত: ১-৬)
সুরা ইখলাস
সুরা ইখলাস পবিত্র কুরআনের ১১২ নম্বর সুরা। এর আয়াতসংখ্যা ৪। এই সুরায় বলা হয়েছে, বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেওয়া হয়নি। আর তাঁর কোনো সমকক্ষ নেই।’(সুরা ইখলাস, আয়াত: ১-৪)
উল্লেখযোগ্য যে, এই তিনটি সুরা ফরজ নামাজের পর নিয়মিত পাঠ করা অত্যন্ত উত্তম আমল। এর অনেক সওয়াব রয়েছে। এছাড়া হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস ও এই দুই সুরা (ফালাক, নাস) পড়বে, সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ২৯০৩)
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. প্রতিরাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন তিনি নিজের উভয় হাত একসঙ্গে মেলাতেন, তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিয়ে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তেন। তারপর তিনি দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব, হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এটি তিনবার করতেন। ( বুখারি শরিফ,হাদিস: ৫০১৭)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই তিনটি সুরা নিয়মিত আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।