গর্ভবতী অবস্থায় নারীর শরীরের অবকাঠামো ও শারীরিক অবস্থা অনেক পরিবর্তিত হয়। গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় এমন কোনো কাজ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে অনেক নারী নামাজের সেজদা স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে পারেন না। এই অবস্থায়, নামাজে সেজদার শক্তি হারিয়ে ফেলা অনেকের জন্য একটি সাধারণ বিষয়। তবে, সেক্ষেত্রে সেজদা আদায় করার জন্য বিকল্প উপায় রয়েছে।
প্রথমত, স্বাভাবিকভাবে সেজদা না করতে পারলে, চেষ্টা করা উচিত জমিনে হাত রেখে সেজদা করার। যদি সেজদা এভাবে করা সম্ভব না হয়, তবে যতটুকু ঝুঁকতে পারেন ততটুকু ঝুঁকে এবং ইশারায় সেজদা করা যেতে পারে। তবে, ইশারায় সেজদা করার সময় সামনে কোনো টেবিল, বালিশ বা অন্য কোনো বস্তু রেখে সেজদা করা যাবে না। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সা. একজন রোগী দেখতে গিয়ে তাকে একটি বালিশের ওপর সেজদা করতে দেখলেন। তিনি বালিশটি সরিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি যদি সক্ষম হও তবে জমিনের ওপর সেজদা করো, অন্যথায় ইশারা কর। (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৮৪)
এছাড়া, নামাজে সেজদা এবং রুকুতে ইশারা করার সময়, সেজদা রুকুর চেয়ে বেশি ঝুঁকে করা উচিত। রসুল সা. বলেছেন, আর তোমার সেজদা রুকু থেকে বেশি ঝুঁকে আদায় করবে। (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৮৪)
গর্ভবতী নারী অসুস্থ ব্যক্তির মতো নামাজ আদায় করবেন, অর্থাৎ তার শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী একাধিক বিকল্পের যে কোনো একটি গ্রহণ করতে পারবেন। রসুল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো, যদি তা পারো না তবে বসে নামাজ পড়ো, আর যদি তাও না পারো তবে ইশারা করে নামাজ আদায় করো।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১০৫০)
যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম, সে বসে নামাজ পড়বে এবং বসে রুকু-সেজদা করবে। এই ক্ষেত্রে, সেজদা রুকু থেকে কিছুটা বেশি ঝুঁকতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি বসে রুকু-সেজদা করতে সক্ষম না হন, তাহলে তিনি শুয়ে ইশারায় নামাজ পড়বেন। তার পা কিবলামুখী অবস্থায় রেখে, মাথা সামান্য উঁচু করে শুয়ে নামাজ পড়া উচিত। এরপর ইশারায় রুকু ও সেজদা আদায় করা যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/২৭৩)
এছাড়া, সেজদা করার জন্য কোনো বস্তু ওপরে তুলে সেটার ওপর সেজদা করার প্রয়োজন নেই। সেজদা শুধুমাত্র জমিনে করা উচিত। (সুনানে কুবরা : ৩৮১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/২৭৩)
গর্ভাবস্থায় নারীর জন্য নামাজ আদায় করতে বিভিন্ন বিকল্প পন্থা রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা এবং শক্তি অনুযায়ী, সে জমিনে সেজদা করতে পারে অথবা ইশারায় সেজদা করতে পারে। ইসলামে নামাজের শুদ্ধতা বজায় রাখতে এই সব বিকল্প পন্থার মধ্যে যে কোনো একটির অনুসরণ করা উচিত, যা তার শারীরিক অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।