ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো, যেকোনো ইবাদত বা সৎকাজ কুরআন-সুন্নাহতে যার কোনো প্রমাণ নেই, তা নতুনভাবে উদ্ভাবিত ও বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। ইসলামের অন্যতম মূলনীতি হলো রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই মহান বাণী, যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বিনের মধ্যে এমন কিছু উদ্ভাবন করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৬৯৭) অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করে, আমাদের দ্বিনের নির্দেশনার সাথে যার মিল নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৩৮৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছু মাসকে পবিত্র করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো রজব মাস। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারটি; তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের উপর জুলুম কর না। (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৬)
এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, একজন মুসলমানের জন্য সব সময়ই আল্লাহর বিধান ও নিদর্শনসমূহকে সম্মান করা অপরিহার্য। পবিত্র মাসগুলোতে এসবের প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এর মানে হলো হারাম কাজগুলো থেকে বিরত থাকা, পাপ থেকে বাঁচা, নেক কাজ দ্রুত করা এবং বিদআত ও নব উদ্ভাবিত ইবাদতগুলো থেকে দূরে থাকা।
উলামায়ে কেরামের কাছে নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, রজব মাসকে বিশেষ কোনো নফল ইবাদত বা আমলের জন্য নির্ধারণ করার কোনো প্রমাণ নেই। অবশ্য যেসব আমল সার্বক্ষণিক বৈধ, সেগুলো অবশ্যই করা যাবে। অনেক হাদিস রয়েছে যেগুলোতে রজব মাসে বিশেষভাবে রোজা রাখা বা রাত জাগরণ করার ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু হাদিসের বিশেষজ্ঞ আলেমগণ সেগুলোকে হয় দুর্বল অথবা সম্পূর্ণ জাল বলে প্রমাণ করেছেন।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন, রজবের ফজিলত, রজবের রোজা রাখা বা এই মাসে বিশেষ কোনো আমল করার বিষয়ে যে হাদিসগুলো রয়েছে, সেগুলো হয় দুর্বল, নয় মিথ্যা। ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়্যিম, ইবনে রজব ও ইমাম নববী রহ.-এর মতো অন্যান্য আলেমও একই বক্তব্য দিয়েছেন।
রজব মাসের ২৭ তারিখকে মেরাজের রাত হিসেবে উদ্যাপন করা একটি নব উদ্ভাবিত বিদআত। বাস্তবে মেরাজের সঠিক তারিখ নির্ধারণে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। তাই, এই রাত উদ্যাপন করাও ভিত্তিহীন।
প্রচলিত আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে প্রবেশ করলে বলতেন, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন। সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। কিন্তু এ কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে সঠিক নয়। ইমাম নববী, ইবনে রজব ও পরবর্তী অনেক মুহাদ্দিস, যেমন শাইখ ইবনে বায ও আলবানি রহ. একে দুর্বল হাদিস বলে গণ্য করেছেন।
অবশ্য কুরআন ও সুন্নাহর সাধারণ প্রমাণ অনুসারে আল্লাহর কাছে দোয়া করা বৈধ। নির্দিষ্টভাবে কোনো দোয়া উদ্ভাবন করা সঠিক নয়।
ইমাম ইবনে রজব রহ. বলেছেন, মুআল্লা ইবনে ফজল বলেন, সালাফরা ছয় মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন তিনি তাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। আর বাকি ছয় মাস দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাদের আমল কবুল করেন। তাই, শরিয়তের অনুসারী হোন, সফল হবেন।
শরিয়তের নির্ভুল নির্দেশনা মেনে চলুন, এতে সফলতা ও কল্যাণ লাভ করবেন। আর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কিছু বলতে হলে নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া বলবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা কৃপা লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক ভাবে বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন । আমিন ।