রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারটি হলে পবিত্র কুরআন পুড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এসব হলে দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে পবিত্র কুরআনের পৃষ্ঠা পুড়িয়ে ফেলেছে এবং একটি হলে বিজেপির লোগো আঁকা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং দ্রুততার সাথে অপরাধীদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) দিবাগত রাতের কোনো এক সময় এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা সুনির্দিষ্টভাবে তদন্ত করার জন্য ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খানকে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এ পর্যন্ত চারটি হলে কুরআন পোড়ানোর মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও জানান, অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এ ঘটনাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। শিক্ষার্থীরা দ্রুততার সাথে দুষ্কৃতকারীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন জানান, তিনি দুটি কুরআন শরীফে প্রথম ও শেষের কিছু সুরা পুড়তে দেখে বুক সেলফে রেখেছেন, তবে এর মাঝের ৭০ শতাংশ পৃষ্ঠা অক্ষত ছিল। তিনি জানান, এটি প্রাকৃতিক আগুনে পুড়েনি, বরং পরিকল্পিতভাবে কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এই কাজটি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী সজিব বলেন, কুরআন পোড়ানোর ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। একটি উগ্রবাদী চক্র বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুনর রশিদ জানান, তিনি সকালে হল কর্মকর্তার মাধ্যমে কুরআন পোড়ানোর ঘটনা জানতে পেরেছেন। তিনি এটিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দোষীদের শাস্তির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিজেপির লোগো প্রসঙ্গে অধ্যাপক হারুনর রশিদ বলেন, হলে এমন কিছু টাঙানোর কথা শোনা যায়নি। তিনি জানিয়েছেন, দুপুর ১টায় হলের প্রভোস্ট কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে, যেখানে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ ও ন্যক্কারজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে প্রতিরোধ করা যায়।