শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
৩ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

ইসলাম ও জীবন

ধনী হয়েও যে সাহাবীর কাফন হয়েছে ছোট একটি চাদরে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৬:৫৯

ধনী হয়েও যে সাহাবীর কাফন হয়েছে ছোট একটি চাদরে

মুসলমানদের ইতিহাসে এমন অনেক মহান ব্যক্তি আছেন, যারা নিজের জীবনকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের রা., যিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ইসলাম ধর্মের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাস যে মুসলমানের কাছে কত তুচ্ছ হতে পারে, তা তিনি প্রমাণ করেছেন।

মুসআব ইবনে উমায়ের ছিলেন মক্কার এক ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত আদরের সন্তান। তার বাবা তাকে দু’শ দেরহাম মূল্যের কাপড় কিনে পরাতেন, যা তখনকার যুগে ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। সে সময়ের সবচেয়ে দামি পারফিউম ও উন্নতমানের বাহন ব্যবহার করতেন তিনি। শান-শওকত এবং বিলাসিতার মধ্যে তিনি বড় হন।

কিন্তু একদিন মুসআব রা. ইসলাম গ্রহণ করেন, এবং তার হৃদয়ে একটি নতুন বিশ্বাস জন্ম নেয়। তার পরিবার তা মেনে নিতে পারেনি এবং তাকে বন্দী করে রেখেছিল। তবে মুসআব রা. একদিন সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যান এবং ইসলামের পথে হিজরত করেন।

দুনিয়ার সুখ-সুবিধাকে তিনি তুচ্ছ মনে করেছিলেন এবং ইসলামকে বিধাতার দেওয়া শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এজন্যই তিনি প্রথমে হাবশায় হিজরত করেন, যেখানে তিনি বহু কষ্টের মধ্যে দিনযাপন শুরু করেন। তবে আল্লাহর পথে এই সংগ্রাম তাকে আরও দৃঢ় করেছে। একদিন মদিনায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তার দেখা হয়।

উহুদ যুদ্ধে মুসআব রা. ইসলামের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যুদ্ধে মুসলমানদের বিপর্যয় দেখা দিলে, তিনি পতাকা আঁকড়ে ধরেছিলেন, এমনকি তার হাত কাটা যাওয়ার পরও। যুদ্ধের সময়, এক কাফের তার ডান হাত কেটে ফেললে, তিনি পতাকা সামলাতে বাম হাত ব্যবহার করেন। কিন্তু তার বাম হাতও কেটে ফেলা হয়। তবুও তিনি পতাকা নিচে পড়তে দেননি।

যখন মুসআব রা. শহিদ হন, তার দাফনের সময় শুধুমাত্র একটি ছোট চাদর ছিল। সেই চাদর এত ছোট ছিল যে, তা দিয়ে মাথা ও পা একসাথে ঢাকা সম্ভব ছিল না। তবে তার শরীরের শেষ চাদরটি আল্লাহর পথে মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে রইল।

হজরত মুসআব রা. এর জীবন ছিল ইসলামের প্রতি অবিচল আস্থা এবং আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি পৃথিবীর সব আরাম-আয়েশ তুচ্ছ মনে করেছিলেন এবং ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার এই অবিচলতা আমাদের জন্য একটি শিক্ষা, যে কীভাবে জীবনকে আল্লাহর পথে নিবেদিত করা যায়।

আজকের দিনে, যখন আমাদের অনেক কিছুই প্রলোভনস্বরূপ, মুসআব রা. এর জীবন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আসল সৌভাগ্য আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করায়।

হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের রা. এর জীবন আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, পরকালীন সুখের জন্য পৃথিবীর ভোগ-বিলাস ত্যাগ করা অতি তুচ্ছ। তার এই ত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দুনিয়ার জীবনে আসল সৌভাগ্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা তার পথে চলা।

এ সম্পর্কিত আরো খবর

শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল

শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল

০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪