রজব মাসের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও তওবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই মাসে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ইসলামি ইতিহাসে এ মাসের তাৎপর্য অনেক। কারণ, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসেই মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস, সেখান থেকে সপ্তম আকাশে ভ্রমণ করেন। ভ্রমণ পথে তিনি অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করেন। এবং সাক্ষাৎ পান অনেকেরই।
মেরাজের যাত্রাপথে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী কী প্রত্যক্ষ করেছেন ও কাদের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। সেই বিষয় সম্পর্কে আজ আমরা জানবো। ইনশাআল্লাহ।
১. আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ ও কথোপকথন
আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকট নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সরাসরি দেখেছেন এবং কথা বলেছেন। কুরআনে এসেছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা দেখেছে, তোমরা কি সে বিষয়ে তার সাথে বিতর্ক করবে? নিশ্বয়ই সে (আল্লাহকে) আরেকবার দেখেছিল সিদরাতুল মুনতাহার (প্রান্তবর্তী বদরি বৃক্ষের) নিকট। (সুরা নাজম, আয়াত: ১২-১৪)
২. নবীগণের সাথে সাক্ষাৎ
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত আকাশে ৭ জন বিশিষ্ট নবীগণের সাক্ষাৎ পান। এছাড়াও ফিরে আসার পথে বায়তুল মুকাদ্দাসে অনেক নবীর সাক্ষাৎ পান। এবং নামাজে সকলের ইমামতি করেন। (মুসলিম, হাদিস: ১৭২)
৩. জান্নাতি ও জাহান্নামিদের সাথে সাক্ষাৎ
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রথম আসমানে যান-দেখেন এক ব্যক্তি, তার ডান পাশে কিছু রুহ আর বাম পাশে কিছু রুহের কাফেলা। তিনি ডানদিকে তাকালে হাসেন আর বাম দিকে তাকালে কাঁদেন। তিনি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্ভাষণ জানালেন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, জিবরাইল (আলাইহিসালাম), কে তিনি? জিবরাইল আলাইহিসসালাম বললেন, ইনি আদম আলাইহিসসালাম। আর তাঁর দুই পাশে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডানদিকেরগুলো জান্নাতি আর বামদিকেরগুলো জাহান্নামি। এজন্য তিনি ডানদিকে তাকিয়ে হাসেন আর বামদিকে তাকিয়ে কাঁদেন। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৪২)
৪. গিবতকারী মানুষের সাথে সাক্ষাৎ
এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গমন করেছিলেন, যাদের নখ ছিল তামার। এই নখ দ্বারা তারা স্বীয় মুখ ও বক্ষ আচঁড়াচ্ছিল। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরাইল আলাইহিসসালাম নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালেন, এরা সেই লোক, যারা দুনিয়াতে একে অপরের গিবত করত। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২৪)
৫. মুখভর্তি শাস্তি প্রাপ্ত মানুষের সাথে সাক্ষাৎ
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, যাদের ঠোঁট কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল, ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেত। এদের সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জিবরাইল আলাইহিসসালাম রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে উত্তর দিলেন, এরা এমন বিষয়ে বক্তৃতা দিত, যা তারা নিজেরা আমল করত না। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২৪)
৬. সুদখোরদের সাথে সাক্ষাৎ
শবে মেরাজে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন লোকদের দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা সাপে ভরা ছিল, যা বাহির থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। প্রশ্ন করা হলে জিবরাইল আলাইহিসসালাম জানালেন, এরা সুদখোর। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২৪)
৭. হাউজে কাওসারের মহান নেয়ামত
মোতি জহরতের প্রাসাদে ঘেরা একটি নহর দেখতে পেলেন, যার পানি ছিল মেশক-এর চেয়ে বেশি সুগন্ধিময়। এটা কী- নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলে জিবরাইল আলাইহিসসালাম বললেন, এর নাম,‘কাওসার’ যা আপনার প্রতিপালক একমাত্র আপনার জন্যই সুরক্ষিত করে রেখেছেন।
৮. চারটি নদীর দৃশ্য
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি নদীও দেখেছিলেন। এর মধ্যে দু’টি জাহেরি আর দুটি বাতেনি। বাতেনি দুটি জান্নাতে প্রবাহিত আর জাহেরি দুটি হচ্ছে, নীল ও ফুরাত।
৯. জান্নাতের আওয়াজ শুনে বেলালের মর্যাদা
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে প্রবেশ করে একপাশে একটি হালকা আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কীসের আওয়াজ? জিবরাইল আলাইহিসসালাম বললেন, মুয়াজ্জিন বেলালের কণ্ঠ। মিরাজ থেকে ফিরে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বললেন, বেলাল সাফল্য অর্জন করেছে, আমি তার জন্য এমন সব মর্যাদা দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৫৭)
রজব মাস ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ মাস, যা মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, তওবা এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের সময়। এই মাসটি নবীজির মিরাজের মাধ্যমে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষার বার্তা নিয়ে আসে। রজব আমাদের জন্য এক নতুন সুযোগ, যেখানে আমরা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে উন্নত করতে পারি।