মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

পরীক্ষামূলক সংস্করণ

ইসলাম ও জীবন

২০২৪-এর বিদায়ে জীবনের অমূল্য শিক্ষা

সকালের পর আসে সন্ধ্যা, সন্ধ্যার পর আবার নতুন করে শুরু হয় সকাল। এমনভাবে একে একে পার হয়ে গেল ২০২৪ সালের প্রতিটি ক্ষণ। জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল ৩৬৫টি দিন, যা কখনোই আর ফিরে আসবে না। যদি আমরা আমাদের চারপাশে একটু গভীরভাবে দৃষ্টি দিই, তবে দেখতে পাবো, এই চলে যাওয়া বছরটি শুধু সময়কেই পেছনে ফেলে যায়নি, […]

নিউজ ডেস্ক

৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৪

সকালের পর আসে সন্ধ্যা, সন্ধ্যার পর আবার নতুন করে শুরু হয় সকাল। এমনভাবে একে একে পার হয়ে গেল ২০২৪ সালের প্রতিটি ক্ষণ। জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল ৩৬৫টি দিন, যা কখনোই আর ফিরে আসবে না। যদি আমরা আমাদের চারপাশে একটু গভীরভাবে দৃষ্টি দিই, তবে দেখতে পাবো, এই চলে যাওয়া বছরটি শুধু সময়কেই পেছনে ফেলে যায়নি, বরং একসাথে নিয়ে গেছে বহু চেনা-অচেনা মানুষকেও। তারা আর কখনোই পৃথিবীর বুকে ফিরে আসবে না, আর কখনোই দেখতে পাবে না প্রতিদিনের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মায়াবী দৃশ্য।

আবার যাদের উপর ২০২৫-এর প্রথম সূর্যোদয় হয়েছে, এ নতুন বছরের বিদায়কালেও তাদের অনেকেরই জীবন প্রদীপ নিভে যাবে। ২০২৬-এর প্রথম সূর্যোদয় আর তাদের দেখার সুযোগ হবে না। তারা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে এই নয়নাভিরাম পৃথিবীর বুক থেকে।

হ্যাঁ, এটাই জীবনের বাস্তবতা। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে হয়ত এই বাস্তবতাকে ভুলে থাকা যায়, কিন্তু কখনো অতিক্রম করা যায় না। কুরআন কারিমের স্পষ্ট ঘোষণা- كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। অতঃপর তোমাদেরকে আমার কাছেই ফিরিয়ে আনা হবে।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত-৫৭)

তাইতো হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. বলতেন,
إذا أمسيت فلا تنتظر الصباح، وإذا أصبحت فلا تنتظر المساء، وخذ من صحتك لمرضك، ومن حياتك لموتك
‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের অপেক্ষা করো না। আর সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তুমি সুস্থতাকেই গ্রহণ করো অসুস্থতার (ক্ষতিপূরণের) জন্য এবং জীবনকে গ্রহণ করো মৃত্যুর (পাথেয় সংগ্রহের) জন্য।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস : ৬৪১৬)

মোটকথা, মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হলো সময়। প্রতিটি মুহূর্ত জীবনের একেকটি অংশ। একটি মুহূর্ত হারিয়ে ফেলা মানে জীবনের একটি অংশকে হারিয়ে ফেলা। এক কথায় বলা যেতে পারে, মূলত সময়ই জীবন। বিশিষ্ট তাবেয়ী হজরত হাসান বসরী রহ. বলেছেন-
‘হে আদম সন্তান! তুমি তো কিছু দিবসের সমষ্টি মাত্র। একটি দিন গত হওয়া মানে তোমার কিছু অংশ চলে যাওয়া।’

হাদিস শরিফে রসুল সা. ইরশাদ করেছেন-
‘প্রত্যেকেই প্রত্যুষে উপনীত হয়ে নিজ সত্তাকে বিক্রি করে। হয়ত আল্লাহর কাছে বিক্রি করে আল্লাহর বান্দা হয়ে দিনযাপন করে। এই ব্যক্তি নিজেকে (জাহান্নাম) মুক্ত করে। অথবা নফস ও শয়তানের কাছে বিক্রি করে তাদের বান্দা হয়ে দিনযাপন করে। এই ব্যক্তি নিজেকে ধ্বংস করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩)

তাই শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সময়কে হেলায়-খেলায় নষ্ট করা যাবে না। বিরত থাকতে হবে সর্বপ্রকার অবৈধ ও অশ্লীল কাজ থেকে। এমনকি বর্ষবরণের নামে থার্টি ফাস্ট নাইট-এর মত বিজাতীয় কুসংস্কার পালন করা থেকেও। কারণ বিজাতীয় কুসংস্কার পালনের ব্যাপারে রাসূল সা. কঠোর ধমকি বাণী উচ্চারণ করেছেন। ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. বলেছেন-
من تشبه بقوم فهو منهم
‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)

সর্বোপরি, ২০২৪-এর বিদায় লগ্নে এ বছরের ক্রটি-বিচ্যুতির জন্য আমরা মহান রবের দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার করি। আর দৃঢ় সংকল্প করি, আমরা আমাদের এই মহা মূল্যবান সময়কে কিছুতেই হেলায়-খেলায় নষ্ট করবো না। আমরা আমাদের অন্তরকে সর্বদা জাগ্রত রাখবো মহান রবের স্মরণে। ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুন-আমিন।

লেখক: মুফতি মুখলিছুর রহমান
মুদাররিস, জামিআ আরাবিয়া আশরাফুল উলূম কুষ্টিয়া

ইসলাম ও জীবন

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাজধানীতে জশনে জুলুছে লাখো মুসল্লির ঢল

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীতে আয়োজিত হলো জশনে জুলুছ। আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনিয়া মাইজভাণ্ডারিয়া কর্তৃক আয়োজিত এই মহাসমাবেশে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন। সমাবেশে যোগ দেন আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনিয়া মাইজভাণ্ডারিয়ার চেয়ারম্যান ও মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশিন হযরত শাহসুফী শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ […]

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাজধানীতে জশনে জুলুছে লাখো মুসল্লির ঢল

ছবি সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০৩

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীতে আয়োজিত হলো জশনে জুলুছ। আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনিয়া মাইজভাণ্ডারিয়া কর্তৃক আয়োজিত এই মহাসমাবেশে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন।

সমাবেশে যোগ দেন আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনিয়া মাইজভাণ্ডারিয়ার চেয়ারম্যান ও মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশিন হযরত শাহসুফী শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ অল-হাসানী। তাঁর নেতৃত্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু হওয়া জুলুছ দোয়েল চত্বর, শিক্ষা ভবন ও কদমপোয়ারা এলাকা প্রদক্ষিণ করে পুনরায় উদ্যানে ফিরে আসে। পরে এটি শান্তি সমাবেশে পরিণত হয়।

প্রচলিত ঐতিহ্য অনুযায়ী জশনে জুলুছে অংশ নিতে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ আসেন। হাতে ইসলামী পতাকা, কালিমার ব্যানার ও বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো পরিবেশ। আনন্দমুখর এই শোভাযাত্রা ইসলামের শান্তির বার্তা ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয়।

শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আঞ্জুমানের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ অল-হাসানী। তিনি বলেন, “মহানবী (সা.) সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত হয়ে এসেছিলেন। তাঁর দেখানো আদর্শ ও জীবনপদ্ধতি অনুসরণ করলেই বিশ্বে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, ইসলাম মানবতার ধর্ম, আর ইসলামের শিক্ষা হলো ভালোবাসা, সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্বের।

প্রতিবছরের মতো এবারের জশনে জুলুছেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুরো শোভাযাত্রা ঘিরে ছিল পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর বিশেষ নজরদারি।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মনে করছেন, এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইসলামের শান্তি ও সহনশীলতার বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের কাছে মহানবী (সা.)-এর জীবনদর্শন পৌঁছে দিতে জশনে জুলুছ কার্যকর ভূমিকা রাখছে।