মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
৭ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

ইসলাম ও জীবন

আধুনিক সমাজের নারীদের জন্য খাদিজা রা.-এর আর্দশ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:২২

আধুনিক সমাজের নারীদের জন্য খাদিজা রা.-এর আর্দশ

আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি দুটো পৃথক মনকে একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছেন, অনুর্বর হৃদয়ে ভালোবাসার উর্বরতা সৃষ্টি করেছেন এবং মায়াহীন অন্তরে মায়ার শীতলতা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

এ সম্পর্কের অটুট বন্ধন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, তোমাদের জীবনসঙ্গীরা তোমাদের অবিছেদ্য অংশ, আর তোমরাও তাদের অবিছেদ্য অংশ। (সুরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৭)। অর্থাৎ, জীবনের সঙ্গিনী হিসেবে একজন নারী স্বামীর জীবনের আলোর বাতিঘর।

যে নারী সারা জীবন ধরে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আগলে রেখেছিলেন, তার নাম হলো হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা.। নবীজি সা.-তার সততা, বিশ্বস্ততা, ভদ্রতা, পরোপকার প্রবৃত্তি এবং অন্যান্য চারিত্রিক গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেন।

হযরত খাদিজা রা.-এর জীবন আজও বর্তমান সমাজের নারীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তিনি কতটা ভালোবেসে নবীজিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। হাদিসের আলোকে তার কিছু চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো।

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

হজরত খাদিজা রা. প্রিয় নবীজি সা. -এর শুধু স্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। হেরা গুহায় যখন নবীজি সা. ধ্যানে মগ্ন থাকতেন, তখন খাদিজা রা. সেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তার কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন। (সহিহ বোখারি :৩)

যাদের হেরা গুহা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে, তারা জানে সেখানে পৌঁছানো কতটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু হজরত খাদিজা রা.-এর ভালোবাসা ও সাহসিকতা তাকে কখনোই বাধা দেয়নি।

সাহসদাতা ও সান্ত্বনাদাতা নারী

নবীজি সা. যখন প্রথম হজরত জিবরাইল আ.-কে দেখে ভয় পেয়ে যান, তখন তিনি খাদিজা রা.-এর কাছে আসেন। তিনি বলেন, খাদিজা আমার কী হলো? আমি নিজের ওপর আশঙ্কা করছি। খাদিজা রা. তখন সাহস দিয়ে বলেন, না কখনো তা হবে না। বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন।

আল্লাহর কসম! তিনি আপনাকে অপমানিত করবেন না। আপনি স্বজনদের খোঁজখবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, অতিথির সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন। (সহিহ মুসলিম: ২৯৩)

খাদিজা রা-এর এ সাহসিকতা ও সমর্থন নবীজির জন্য এক অমূল্য পাথেয় ছিল।

স্বামীর কাজে সমর্থন

মুসনাদ ইবন হাম্বলে বর্ণিত একটি ঘটনা থেকে জানা যায়, হজরত খাদিজা রা. এক রাতে নবীজির পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন। এক প্রতিবেশিনী যখন নবীজিকে শুনেছিলেন যে তিনি কখনো লাত এবং উজ্জা পূজা করবেন না, তখন খাদিজা রা. দৃঢ়ভাবে বলেন, দূর হোক লাত আর উজ্জা। (মুসনাদে আহমদ: ১৭৪৮৭)

এমন দৃঢ় সমর্থন ও বিশ্বাস নবীজির প্রতি তার ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করে।

আদর্শ জীবনসঙ্গিনীর ইসলাম গ্রহণ

হজরত খাদিজা রা. নবীজির দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা.-এর বর্ণনায় বলা হয়েছে, যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করি, সেদিন আমি তৃতীয় ব্যক্তি ছিলাম যে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। (সহিহ বোখারি: ৩৭২৭)

খাদিজা রা. ও আবু বকর রা. ছাড়া অন্য কেউ তখন ইসলাম গ্রহণ করেননি। এ থেকে বোঝা যায়, খাদিজা রা. ছিলেন নবীজির প্রথম সহযাত্রী ইসলামের পথে।

ভালোবাসায় সমর্পণ

হজরত খাদিজা রা. তার চারিত্রিক গুণাবলির জন্য ‘তাহিরা’ (পবিত্র) নামে সুপরিচিত ছিলেন। বিয়ের আগে তিনি মক্কার এক ধনাঢ্য বিধবা ছিলেন এবং সিরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে তার বাণিজ্য চলত।

নবী মুহাম্মদ সা.-এর গুণাবলির কথা শুনে তিনি নিজের ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব নবীজির ওপর অর্পণ করেন। নবীজির আদর্শ ও সততা দেখে তিনি নিজের সবকিছু তাঁকে সমর্পণ করেছিলেন।

সাহসী ও দৃঢ়চিত্ত নারী

মক্কায় ইসলাম প্রচারের পর, কোরাইশরা নবীজির বিরুদ্ধে শত্রুতা শুরু করে এবং তিনি নানা অত্যাচারের শিকার হন। নবুওয়তের সপ্তম বছরে কোরাইশরা নবীজি এবং তার পরিবার-পরিজনকে একঘরে করে দেয়।

তিন বছর পর্যন্ত তারা বর্ণনাতীত কষ্ট সহ্য করেন। এই কঠিন সময়ে হজরত খাদিজা রা. ছিলেন নবীজির পাশে, তাকে সাহস ও সমর্থন জুগিয়ে চলছিলেন। তিনি তার অগাধ ধনসম্পদ ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যয় করেন।

হযরত খাদিজা রা. এক আদর্শ নারীর মূর্তিমান রূপ। তিনি নিঃস্বার্থভাবে নিজের জীবন ও সম্পদ নবীজির জন্য উৎসর্গ করেছিলেন এবং ইসলামের প্রচারের জন্য আপোষহীন সংগ্রাম করেছিলেন।

তাঁর জীবন আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, কীভাবে একজন নারী একজন পুরুষকে সফল করতে পারে। তাঁর জীবনী আমাদের নারী সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

 

এ সম্পর্কিত আরো খবর

আজকের নামাজের সময়সূচি

আজকের নামাজের সময়সূচি

২০ জানুয়ারী ২০২৫