মানুষ স্বভাবতই ভুল করে থাকে। তবে ভুল করলে তা সংশোধন করা এবং অন্যকে সংশোধনের পথ দেখানো একজন মুসলমানের গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক দায়িত্ব। রসুলুল্লাহ সা. ছিলেন মানবতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও কার্যকরী পদ্ধতিতে মানুষের ভুল সংশোধন করেছেন। তাঁর এই পদ্ধতি আজও আমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য।
আজ আমরা জানবো, রসুলুল্লাহ সা.-এর ভুল সংশোধনের পাঁচটি প্রধান পদ্ধতি সম্পর্কে। ইনশাআল্লাহ।
১. তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য নয়, সুন্দর করে বোঝানো
রসুলুল্লাহ সা. কখনোই ভুলকারীকে অপমান বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন না। বরং খুব সুন্দরভাবে তাকে ভুল বুঝিয়ে দিতেন। একবার মুয়াবিয়া ইবনে হাকাম রা. রসুলুল্লাহ সা. -এর সঙ্গে নামাজে ছিলেন এবং ভুলক্রমে নামাজে হাঁচি দেয়ার পর তিনি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলেছিলেন।
উপস্থিত লোকজন তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে থাকলে তখন তিনি চুপ হয়ে যাই। নামাজ শেষে রসুলুল্লাহ সা. তাকে তিরস্কার না করে,নম্রভাবে জানিয়ে দিলেন যে নামাজে কথা বলা উচিত নয়, এটি তাসবিহ, তাকবির এবং কোরআন তেলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত।
২. ভালোবাসায় ভুল শোধরানো
একদিন গ্রামে বসবাসকারী এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সা.-এর মসজিদে প্রবেশ করল। এরপর সে ব্যক্তি মসজিদে প্রস্রাব করে ফেললে সাহাবিরা তাকে বাধা দিতে গেলে, রাসূলুল্লাহ সা. তাকে বাধা দিতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, তাকে ছাড় দিন।
এরপর তিনি নম্রভাবে তাকে বুঝালেন যে মসজিদ আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে, এখানে প্রস্রাব করা উচিত নয়। রসুলুল্লাহ সা. এর এই কোমল, সদয় পদ্ধতি মানুষকে দ্রুত সংশোধিত করার জন্য কার্যকর ছিল।
৩. ভুলের সঠিক বিকল্প বলে দেয়া
অনেক সময় আমরা ভুল ধরতে গিয়ে এর সঠিক বিকল্পের সন্ধান দিই না। রসুলুল্লাহ সা. যখন কাউকে ভুল করতে দেখতেন, তখন তিনি শুধু তিরস্কার করতেন না বরং সেই ভুলের সঠিক বিকল্পটিও জানিয়ে দিতেন।
একবার মসজিদে কফের একটি দাগ দেখে তিনি কষ্ট পেয়ে তা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন, ‘তোমরা যখন নামাজে দাঁড়াও, তখন তোমরা তোমাদের রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলো।’ তিনি তাদের বলে দিলেন কীভাবে তাদের আচরণ সঠিক হতে পারে।
৪. বিবেকবোধ জাগিয়ে তোলা
ভুলকারীর বিবেকবোধকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা। কেননা রসুলুল্লাহ সা. কাউকে যখন ভুলে আবদ্ধ দেখতেন, তখন তিনি তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ না করে, বরং বিবেকবোধ জাগ্রত করতেন।
এক যুবক যখন রসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে ব্যভিচারের অনুমতি চাইলেন, তখন রসুলুল্লাহ সা. তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কি এটা তোমার মা, বোন বা মেয়ের জন্য পছন্দ করো?’ যুবক বললেন, না আমি কখনো তা পছন্দ করব না।’
এরপর রসুলুল্লাহ সা. তার জন্য দোয়া করলেন, এবং যুবকের মনকে পবিত্র করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। এই আচরণ যুবকটির বিবেককে জাগিয়ে তোলে ও তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
৫. ভুলের ভয়াবহতা জানানো
ভুলের শাস্তি বা ভয়াবহতা সম্পর্কে জানালে তা থেকে বিরত থাকা সম্ভব। রসুলুল্লাহ সা. কখনো কাউকে একটি ভুলের জন্য শুধু সংশোধন করতেন না, বরং সে ভুলের ভয়াবহতা বা শাস্তি সম্পর্কে সতর্কও করতেন।
একবার তিনি একজন সাহাবিকে মসজিদে নামাজের কাতার থেকে আগে বেরিয়ে যেতে দেখে তাকে তিরস্কার করেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে দাঁড়াবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করবেন।’ এই সতর্কতা শোনার পর সাহাবি তার ভুল বুঝতে পারলেন এবং সংশোধন হলেন।
রসুলুল্লাহ সা. -এর ভুল সংশোধনের এই পদ্ধতিগুলি আজও আমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য, যা তিনি সবসময় প্রজ্ঞা, সহানুভূতি ও ভালোবাসা দিয়ে সম্পন্ন করেছেন।
অন্যদের ভুল সংশোধন করার সময় আমাদেরও এই পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর সমাজ গড়তে পারি।
আমরা সবাই যেন রসুলুল্লাহ সা.-এর এই সুন্দর শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি। আমিন।