শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
৩ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

ইসলাম ও জীবন

নারীরা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে কি?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:২২

নারীরা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে কি?

ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয়, বরং মানুষের জীবনের সকল দিককে সুশৃঙ্খল করার জন্য একটি সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামে নারী-পুরুষের সম্পর্ক, সাজসজ্জা, আচরণ এবং তাদের মধ্যে শালীনতা বজায় রাখার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

বিশেষত, সেন্ট, পারফিউম, বডি স্প্রে বা আতর ব্যবহারের বিষয়টি ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে , কারণ এটা একজনের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। তবে, সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত এবং বিধি-নিষেধ রয়েছে, যা নারীদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য।

ইসলামে সুগন্ধির গুরুত্ব

ইসলামে সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব, অর্থাৎ এটা একটি প্রিয় ও সুন্নত আমল। রসুলুল্লাহ সা. সুগন্ধি অত্যন্ত পছন্দ করতেন এবং নিয়মিত এটি ব্যবহার করতেন।

হজরত আনাস ইবনে মালিক রা.-এর বর্ণনায় রয়েছে, রসুল সা. যখন আমাদের দিকে আসতেন, তখন তাঁর সুগন্ধির কারণে আমরা আগে থেকেই বুঝতে পারতাম যে তিনি আসছেন। (আখলাকুন্নবী সা. ২১৮)

তবে, নারীদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলাম বিশেষ সতর্কতা প্রদান করেছে। নারীরা ঘরে, তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু গায়রে মাহরাম (যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ) বা পরপুরুষের সামনে সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

ইসলাম নারীর শালীনতা ও সতীত্ব রক্ষার জন্য পর্দার বিধান দিয়েছে ও সুগন্ধি ব্যবহারের মাধ্যমে পরপুরুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা বা তাদের কামনা উত্তেজিত করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ’ (সুরা আন-নুর, আয়াত: ৩১), অর্থাৎ নারীরা যেন তাদের সাজ-সজ্জা প্রকাশ না করে।

ইসলামি বিধান

রসুলুল্লাহ সা. হাদিসে বলেছেন, ‘যে নারী সুগন্ধি মেখে কোনো পুরুষের পাশ দিয়ে যায়, যাতে তারা তার গন্ধ অনুভব করতে পারে, সে নারী ব্যভিচারিণী।’ (সুনানে নাসায়ী: ৫১২৬)

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রহ.-এর মতে, সুগন্ধি মানুষের যৌন কামনা উত্তেজিত করতে পারে, এজন্য এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (ফাতহুল বারি: ২/২৭৯)

নারীদের ক্ষেত্রে ইসলামে শালীনতার গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তাই ঘরের ভেতরে সুগন্ধি ব্যবহার জায়েজ। অথবা এমন স্থানে, যেখানে কোনো গায়রে মাহরাম উপস্থিত নেই, সেখানে সেন্ট, পারফিউম বা বডি স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে শর্ত হলো, এগুলোতে কোনো নাপাক বস্তু মেশানো থাকা যাবে না। (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৮/৭১)

তাছাড়া, ইবাদত বা মসজিদে যাওয়ার সময়ও নারীদের সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। রসুল সা. বলেছেন, ‘আল্লাহর বান্দিদের মসজিদে আসতে বারণ করো না, তবে তারা যেন সুগন্ধি ব্যবহার ছাড়া সাধাসিধাভাবে আসে।’ (আহমদ, আবু দাউদ; সহিহ জামে: ৭৪৫৭)

ইসলাম নারীর সৌন্দর্যকে অস্বীকার করে না। বরং নারীকে তার সৌন্দর্যকে উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছে। তবে এই সৌন্দর্য প্রদর্শন সীমিত থাকবে নিজস্ব পরিবার বা মাহরামদের মধ্যে। ইসলামের এই নির্দেশনাগুলো নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

এ সম্পর্কিত আরো খবর