বিশ্ব ইজতেমার ৪২ দিন আগে জোড় ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার পর পুলিশ সাদপন্থিদের মুখপাত্র মোয়াজ বিন নূরকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে।
মামলাটি করেছেন জুবায়রপন্থি শুরায়ে নেজামের সদস্য এস এম আলম হোসেন। তিনি কিশোরগঞ্জের গাইটাল এলাকার বাসিন্দা এবং আলমি শুরার প্রতিনিধিত্বকারী।
পুলিশ শুক্রবার ভোরে ঢাকার উত্তরা থেকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মোয়াজ বিন নূরকে গ্রেপ্তার করে। তিনি উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা এবং সাদপন্থিদের পক্ষ থেকে মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তাকে মামলার পঞ্চম নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি বৃহস্পতিবার টঙ্গী পশ্চিম থানায় দায়ের হয়। এজাহারে সাদপন্থিদের শীর্ষ নেতা ওয়াসিফুল ইসলামসহ ২৯ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও অনেককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষের কারণে এই মামলাটি দায়ের করা হয়, যা দুই পক্ষের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের অংশ।
অন্য আসামিরা হলেন-আব্দুল্লাহ মনসুর, ওসামা ইসলাম, ড. কাজী এরতেজা হাসান, মোয়াজ বিন নুর, জিয়া বিন কাশেম, আজিমুদ্দিন, সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, শফী উল্লাহ, আনাস, আব্দুল্লাহ শাকিল, রেজা আরিফ, আব্দুল হান্নান, রেজাউল করিম তরফতার, মুনির বিন ইউসুফ, সায়েম, হাজী বশির শিকদার, মনির হোসেন তুষার ওরফে হাজী মনির, ইঞ্জিনিয়ার মুহিবুল্লাহ, মো. আতাউর রহমান, তানভীর, বাবুল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আবুল বশর, ইঞ্জিনিয়ার রেজানুর রহমান, নাসির উদ্দিন সিকদার, ড. আব্দুস সালাম, ওয়াসি উদ্দিন, মিজান ও শাহাদাত।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সাদপন্থি আসামিরা ২০ ডিসেম্বর জোড় ইজতেমা করার জন্য ১৮ ডিসেম্বর ভোরে জোর পূর্বক বিশ্ব ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে হতাহতের ঘটনা ঘটায়। আাসামিরা আলমি শুরার সাথী কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত উসমান গনির ছেলে আমিনুল ইসলাম ওরফে বাচ্চু মিয়া (৭০), ফরিদপুর সদর থানার কমলা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) ও বগুড়া জেলার সদর থানার ধাওয়াপাড়া পূর্বপাড়া গ্রামের ওমর উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলামকে (৭০) পিটিয়ে হত্যা করে। নিহতরা সকলেই আলমি শুরা বা শুরায়ে নেজামের (জুবায়েরপন্থি) সাথী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসকান্দার হাবিবুর রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, আগামী বছর দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ধাপ ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ৩ ডিসেম্বর শুরায়ে নেজামের আয়োজনে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থিরা জোড় ইজতেমা করবেন ও জুবায়েরপন্থিরা করতে দিবে না বলে বিরোধ চলছিল। বুধবার সাদপন্থিরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাতেই ঘটে যায় সংঘর্ষ। নিহত হন তিনজন আহত হয় শতাধিক। এই অবস্থায় সরকার দুই পক্ষের দখল থেকে ইজতেমা ময়দান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ময়দান খালি করার জন্য করা হয় মাইকিং। ফলে রাত ৮ টা পর্যন্ত সাদপন্থিরা ময়দান ছেড়ে চলে যায়।