মুসলিম সমাজে সাধারণত আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য ‘হুজুর’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বাংলা ভাষায় যেমন ‘জনাব’ বা ‘মহাশয়’ সম্মানসূচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তেমনি ফার্সি, উর্দু ও বাংলায় ‘হুজুর’ শব্দটি একটি সম্মানজনক উপাধি। তবে অনেকেই হুজুর শব্দের সঠিক অর্থ জানেন না, যার ফলে বিভিন্ন ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়।
কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে, ‘হুজুর’ শব্দটি শুধুমাত্র আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রযোজ্য এবং অন্য কারও ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা ঠিক নয়। তারা মনে করেন, হুজুর একমাত্র নবীর জন্যই সম্মানসূচক শব্দ। কিন্তু এটা একটি ভুল ধারণা মাত্র।
হুজুর শব্দের মূল অর্থ হল ‘উপস্থিতি’ বা ‘জনাব’ যা সম্মান প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয়। ঠিক যেমন ‘স্যার’ শব্দটি সম্মানার্থে ব্যবহৃত হয়, তেমনি আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, এমনকি ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ক্ষেত্রেও এই শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে কিছু দুষ্ট লোক নানা সময়ে অন্যদের তাচ্ছিল্যের সুরে ‘হুজুর’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে, যারা সুন্নত অনুযায়ী পোশাক পরিধান করে এবং নববী আর্দশে চলার চেষ্টা করেন, তাদেরকে ঠাট্টা করে ‘হুজুর’ বলে সম্বোধন করা হয়।
এই ধরনের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে শিখায়, এবং কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলিমকে উপহাস বা তাচ্ছিল্য করার কাজ কখনোই উচিত নয়।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! কোনো সম্প্রদায় যেন অন্যকোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম।
আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তওবা করে না, তারাই তো জালেম’। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১১)
এ আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, মুসলমানদের উচিত একে অপরকে সম্মান দেখানো, এবং কেবলমাত্র ঈমানের পথে চলা ব্যক্তিকে তাচ্ছিল্য বা উপহাস করার কথা চিন্তা কখন না করা।
কারণ, ‘হুজুর’ শব্দটি ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয়, এবং এই শব্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের প্রত্যেকের উচিত, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী একে অপরকে সম্মান করা, এবং কখনোই কাউকে তার ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত কারণে উপহাস বা তাচ্ছিল্য করা উচিত নয়।
আল্লাহ তায়ালা আমদেরকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন । আমিন ।