শীতকালের আগমন আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতা ও নিখুঁত পরিকল্পনারই প্রমাণ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। (সূরা: আল কামার, আয়াত: ৪৯)।
শীতের তীব্র ঠাণ্ডা থেকে শুরু করে বসন্তের আগমন পর্যন্ত প্রকৃতির এই পালাবদল, আল্লাহ তায়ালার অপরিসীম ক্ষমতার নিদর্শন। হাদিস শরীফে এসেছে, জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণেই পৃথিবীতে শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল আসে।
শীতকাল: মুমিনের বসন্তকাল
শীতকাল যদিও অনেকের কাছে শুষ্ক ও হিমশীতল মনে হলেও, মুমিনের জন্য এটা এক অনন্য বসন্তকাল। বসন্তে প্রকৃতি নানা রঙের ফুলে সজ্জিত হওয়ার মতো, শীতকালে মুমিনের জন্য নেক আমলের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়।
রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল।(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১১৬৫৬) শীতকালে দীর্ঘ রাতে ইবাদত-বন্দেগি, ছোট দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে মুমিনগন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার সুযোগ পায়।
শীতকাল ও নবী শিক্ষা
শীতকালের মতো প্রাকৃতিক ঘটনাকে নিয়ে অভিযোগ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। বরং প্রতিটি পরিস্থিতিতে আল্লাহর ইচ্ছা মেনে চলাই মুমিনের কর্তব্য। হাদিস শরীফে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আদম সন্তানরা আমাকে কষ্ট দেয়। তারা সময় ও যুগকে গালি দেয়; অথচ আমিই সময় ও যুগ।(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৯১)
তাই শীতকালে অসুস্থ হলেও অভিযোগ করার পরিবর্তে আল্লাহর কাছে সুস্থতার দোয়া করা উচিত।
শীতকালে অসহায় ও দরিদ্রের প্রতি সহমর্মিতা
শীতকালে অসহায় ও দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে মুসলিম কোনো বস্ত্রহীন মুসলিমকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরাবেন।(আবু দাউদ,হাদিস : ১৬৮২) অর্থাৎ শীতকালে দরিদ্রদের সাহায্য করা এক মহান নেক আমল।
শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে পানাহ চাওয়া
তীব্র শীতের কষ্ট থেকে বাঁচতে রসুলুল্লাহ সা. আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মা আশাদ্দা বারদা হাজাল ইয়াউম, আল্লাহুমা আজিরনি মিন জামহারিরি জাহান্নাম। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আজকের দিনের কী প্রবল শীত! হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নামের জামহারির (তীব্র ঠাণ্ডা) থেকে রক্ষা করুন।
তখন আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার এই বান্দা তোমার জামহারির (তীব্র ঠাণ্ডা) থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আর আমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি যে আমি তাকে এর থেকে রক্ষা করেছি।(আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইল, হাদিস : ৩০৬)
শীতকাল মুমিনের জন্য এক অনন্য সুযোগ। এই সময়ে ইবাদত-বন্দেগি, দান-খয়রাত ও অসহায়দের সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।