মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
৭ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

ইসলাম ও জীবন

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নবীজি যা বলে গেছেন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৯

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নবীজি যা বলে গেছেন

শাম অঞ্চল মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতপূর্ণ ভূমি হিসেবে পরিচিত। এটি সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন এবং ফিলিস্তিন নিয়ে গঠিত প্রাচীন শাম রাজ্য বা মুলকে শামের অন্তর্গত। নবী-রসুলদের অনেকেই এই ভূমিতে আগমন করেছিলেন এবং তাদের প্রচারিত দ্বীন এখান থেকেই বিস্তার লাভ করেছিল। ইসলামী ঐতিহ্য ও ইতিহাসে শাম ভূখণ্ডের গুরুত্ব অপরিসীম, কেননা এই ভূমি ভবিষ্যতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও কেয়ামতপূর্ব সময়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

শামের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি

রসুলুল্লাহ সা. শামের প্রতি বিশেষ মমত্ববোধ প্রকাশ করেছেন এবং এই অঞ্চল নিয়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম কিছু ভবিষ্যদ্বাণী নিচে তুলে ধরা হলো-

১. শামের ভবিষ্যদ্বাণী

রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, হিজরতের পর আরেকটি হিজরত শিগগিরই ঘটবে। তখন ভূপৃষ্ঠের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হবে তারা, যারা ইবরাহিম আ.-এর হিজরতভূমি (শাম) দেশে অবস্থান করবে। আর পৃথিবীতে সর্বনিকৃষ্ট মানুষ বাকি থাকবে, যাদের আল্লাহ অপছন্দ করবেন। তাদের ভূমিগুলো তাদের ত্যাগ করবে এবং তারা ফিতনার আগুনে পুড়বে। (আবু দাউদ ২৪৮২)

২. মুসলিম বাহিনীর অবস্থান

ইবনে হাওয়ালা রা. বর্ণনা করেছেন, ইসলামী বাহিনী শিগগিরই শাম, ইয়েমেন এবং ইরাকের দিকে ভাগ হবে। আমি রসুলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কোন বাহিনীতে যোগ দেব? তিনি বললেন, তুমি শামের বাহিনীতে থাকবে, কেননা তা আল্লাহর পছন্দনীয় ভূমি। (আবু দাউদ ২৪৮৩)

৩. শামে আল্লাহর ওলিদের বিশেষ দল

হজরত আলী রা. ইরাকে অবস্থানরত অবস্থায় শামবাসীদের বিষয়ে বলেন, আপনি তাদের ওপর অভিশাপ করুন! তিনি তখন বলেন, না, আমি রসুলুল্লাহ সা. -কে বলতে শুনেছি যে, শাম ভূখণ্ডে আবদালরা (আল্লাহর ওলিদের বিশেষ দল) থাকেন, তারা ৪০ জন। যখনই তাদের থেকে একজন মারা যান, আল্লাহ তার স্থানে অন্য একজনকে রাখেন। তাদের বরকতে বৃষ্টি হয় ও শত্রুর ওপর জয়লাভ হয়। ভবিষ্যতে তাদের ওসিলায় শামবাসীদের থেকে আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে। (মুসনাদে আহমদ ৮৯৬)

৪. শামের কল্যাণ এবং উম্মতের কল্যাণ

রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন শাম ভূখণ্ডে ফাসাদ সৃষ্টি হবে, তখন উম্মতের মধ্যে কল্যাণ থাকবে না। তবে আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত থাকবে, তাদের ক্ষতি করতে কেউ সক্ষম হবে না।(তিরমিজি ২১৯২)

৫. মহাযুদ্ধে শামের ভূমিকা
রসুলুল্লাহ সা. বলেন, মহাযুদ্ধে মুসলিমদের ছাউনি হবে ‘গোতা’ শহরে, যা দামেস্কের পাশে অবস্থিত।(আবু দাউদ ৪২৯৮)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, অচিরেই তোমরা শাম বিজয় করতে পারবে, যখন তোমাদের সেখানে বসবাসের এখতিয়ার দেওয়া হবে, তোমরা দামেস্ক নগরীকে বাসস্থান বানাবে, কেননা তা যুদ্ধবর্তীকালীন মুসলিমদের আশ্রয়স্থল হবে, আর তাদের ছাউনি হবে সে দেশের একটি ভূমি, যাকে ‘গোতা’ বলা হয়। (মুসনাদে আহমদ ১৭৪৭০)

৬. ইমাম মাহদির খেলাফতগ্রহণ

রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, একজন খলিফার মৃত্যুর পর মতানৈক্য দেখা দেবে। তখন একজন (ইমাম মাহদি) মদিনা থেকে মক্কায় আসবেন এবং মানুষের চাপের মুখে বায়াত গ্রহণ করবেন। তার বিরুদ্ধে শাম থেকে একটি দল পাঠানো হবে, কিন্তু তারা বাইদা এলাকায় ভূমিধসে পতিত হবে। (সহিহ মুসলিম ২৮৮২)

৭. ঈসা আ.-এর অবতরণ এবং দাজ্জালকে হত্যা

দীর্ঘ এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, দাজ্জাল শামের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে বের হয়ে পৃথিবীজুড়ে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। ঈসা আ. দামেস্কের পূর্ববর্তী মিনারায় অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে শামের ‘বাবা লুদ’ স্থানে হত্যা করবেন। (সহিহ মুসলিম ২৯৩৭)

এগুলি শামের ভূমির গুরুত্ব এবং কেয়ামতপূর্ব ভবিষ্যৎ ঘটনাগুলির প্রতি রসুলুল্লাহ সা.-এর আগাম বাণী।

এ সম্পর্কিত আরো খবর