ইরানের বিরুদ্ধে হঠাৎ করে কূটনৈতিক চাপের মধ্যে ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছিল, তা প্রথমে নিজেদের ‘কৌশলগত সাফল্য’ হিসেবেই তুলে ধরেছিল তেল আবিব। ইসরায়েলি নেতৃত্বের ধারণা ছিল, পুরো পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর ছয় দিনের মাথায় ইরান থেকে ছোড়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি গণমানসে ভয়, শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন আর কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, এই যুদ্ধ থামবে কোথায়, আর তার পরিণতি কী হবে।
আল জাজিরার সরাসরি সম্প্রচারে ইসরায়েলি রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওরি গোল্ডবার্গ স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন, ইসরায়েলিদের একটি বড় অংশ বিশ্বাস করছিল যে তাদের সরকার পরিস্থিতি ‘হয়তো নিয়ন্ত্রণে আনছে’। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—ইরানের পাল্টা আঘাত সরাসরি ইসরায়েলের কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হেনেছে। গোল্ডবার্গ বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র যখন গোটা অঞ্চলজুড়ে আছড়ে পড়ছে, তখন সরকার কৌশলে শুধুমাত্র দক্ষিণ ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালে আঘাত হানার ঘটনাটিকে সামনে এনে প্রচার করছে যেন ইরান বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।
কিন্তু প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। গোল্ডবার্গ স্পষ্ট করে বলেন,
“হাসপাতাল লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, কিন্তু তার পাশেই রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সদর দপ্তর। ইসরায়েল বরাবরই সামরিক স্থাপনাগুলো শহরের ভেতরে এবং বেসামরিক অঞ্চলের কাছাকাছি স্থাপন করে থাকে—এটা দীর্ঘদিনের একটি নীতিগত ভুল।”

আরেকটি ভয়াবহ দিক তুলে ধরেন তিনি: সেন্সরশিপ। ইসরায়েলি জনগণকে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির খবর জানানো হচ্ছে না। গোল্ডবার্গ বলেন, “ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমেও সাধারণ মানুষ এসব খবর পাচ্ছে না। তথ্য ও ছবি কঠোরভাবে সেন্সর করা হচ্ছে। আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকেও সেন্সরশিপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।”
তিনি যোগ করেন,
“তবে যতটুকু সামনে আসছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে ইরানি হামলা ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও সুপরিকল্পিত। তারা এমন সব স্থানে আঘাত করেছে যেগুলো শুধুমাত্র প্রতিকী নয়, বরং সেনাবাহিনীর পরিচালনা ও প্রতিরক্ষা কৌশলের জন্য অপরিহার্য।”
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল যদি তথ্য গোপন করার এই কৌশল অব্যাহত রাখে, তাহলে জনগণের আস্থা হ্রাস পাবে এবং প্রতিরক্ষা ব্যর্থতার দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাঁধে বর্তাবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও বলছেন, যুদ্ধ এখন আর শুধু রণাঙ্গনের লড়াই নয়—এটি হয়ে উঠেছে তথ্য, জনমত ও আস্থার যুদ্ধও। আর সেই লড়াইয়ে ইসরায়েল ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে।

তুরস্ক, সৌদি ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ নিয়ে ইসলামি সেনাবাহিনী গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইরান। আপনি কি এই আর্মি গঠনের পক্ষে?